কয়েকমাস আগেই জাপানের টোকিওতে ঘটা করে হয়ে গেল সেই অলিম্পিক। জ্যাভেলিনে সোনা জিতে গোটা দেশের আইকন হয়ে উঠলেন পানিপথের যুবক নীরজ চোপড়া। কিন্তু বেজিংয়ে শুরু হয়ে গেল উইন্টার অলিম্পিক। তা নিয়ে তেমন উচ্চবাচ্য নেই।
আসলে, অলিম্পিক বলতে আমরা যেটা বুঝি, সেটা হল সামার অলিম্পিক। আর বেজিংয়ে যেটা শুরু হল, তা হল উইন্টার অলিম্পিক। শীত আর গ্রীষ্মের এই বিভাজনটা কিন্তু প্রায় একশো বছরের পুরনো। ১৯২৪ থেকেই দুটো আলাদা অলিম্পিকের আয়োজন হয়ে আসছে। তার আগে, সামার অলিম্পিকেই শীতের কিছু খেলা অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু বিশ্বের অধিকাংশ দেশই শীতপ্রধান নয়। ফলে, সেইসব দেশে শীতপ্রধান খেলার প্রচলনও নেই। তাই, তাদের কেউ কেউ আপত্তি জানাল। দাবি, অধিকাংশ দেশের সামনে যেসব খেলাধূলার কোনও সুযোগই নেই, সেই খেলা মূল অলিম্পিকে কেন থাকবে? ১৯২৪ নাগাদ ঠিক হল, দুটি আলাদা অলিম্পিক হবে। পরের দিকে দেখা গেল, একই বছরে দুই অলিম্পিক আয়োজনের ঝক্কিও কম নয়। নয়ের দশক থেকে ঠিক হল, মূল অলিম্পিকের দু’বছর পর হবে এই শীত অলিম্পিক।
এখানে ফুটবল, অ্যাথলেটিক্স, সাঁতার বা এই জাতীয় খেলা নেই। এখানে সবথেকে জনপ্রিয় ইভেন্ট হল আইস হকি। এছাড়া অন্যান্য জনপ্রিয় ইভেন্টগুলি হল আলপাইন স্কিং, বায়াথলন, ক্রস কান্ট্রি স্কিং, কার্লিং, ফিগার স্কেটিং, ফ্রি স্টাইল স্কিং, স্কি জাম্পিং, স্নো বোর্ডিং, স্পিড স্কেটিং। যেহেতু বিশ্বের অধিকাংশ দেশ শীতপ্রধান নয়, ফলে সেইসব দেশে এইসব খেলার প্রচলনও নেই। তাই সেই সব খেলায় তারা অংশও নিচ্ছে না। মূল অলিম্পিকে যেমন দুশোর বেশি দেশ, এখানে বিরানব্বইটি। ইভেন্টের সংখ্যা বা প্রতিযোগীর সংখ্যাও অনেক কম। টোকিও অলিম্পিকে ভারত থেকে গিয়েছিলেন ১২৬ জন ক্রীড়াবিদ। এখানে সবেধন নীলমণি একজন। তিনি কাশ্মীরের মহম্মদ আরিফ খান। তিনি অংশ নেবেন আলপাইন স্কিংয়ে।
শীতের অলিম্পিকে ভারতের অংশগ্রহণ ১৯৬৪ থেকে। অস্ট্রিয়ায় সেবারও ভারত থেকে অংশ নিয়েছিলেন মাত্র একজন। চার বছর পর পর হয়ে আসছে এই শীত অলিম্পিক। অধিকাংশ বারই ভারত একজন বা দুজনকেই পাঠিয়েছে। কোনও কোনও বার কাউকেই পাঠায়নি। এখনও পর্যন্ত এই অলিম্পিক থেকে ভারতের কোনও পদকই আসেনি। আসলে, শীতকালীন অলিম্পিকের বেশিরভাগ খেলার সঙ্গেই অনিবার্যভাবে জড়িয়ে আছে বরফ। কাশ্মীর আর হিমাচল এই দুই রাজ্যেই যেটুকু শীতকালীন খেলাধূলার চল। অন্যান্য রাজ্যে সেই প্রচারটাই নেই। যদিও কৃত্রিম বরফ এনে আইস হকির আয়োজন করা যায়। কলকাতার নেতাজি ইনডোরেও একবার এইজাতীয় আয়োজন হয়েছিল। কিন্তু তা এতটাই ব্যয়বহুল যে নিয়মিত করা সম্ভব নয়। তাছাড়া, সেই পরিকাঠানো তৈরি এত সহজ নয়।
সবমিলিয়ে এই অলিম্পিক চলবে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। অর্থাৎ ১৭ দিনের আয়োজন। এমনিতেই আমাদের দেশে এই নিয়ে তেমন হেলদোল নেই। যেটুকু শিরোনামে এসেছে, তা করোনা ও রাজনৈতিক কারণে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বয়কটের ডাক দিয়ে খবরে এসেছে ভারত। পদক এলে কিছুদিন হইচই হবে। আর না এলে যথারীতি এই অলিম্পিক আবার বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে যাবে।