উত্তম জানা
টিকিটের জন্য এত হাহাকার। কিন্তু মাঠ সেভাবে ভর্তি হচ্ছে না। গ্যালারির অনেকটা অংশ ফাঁকাই থেকে যাচ্ছে। শেষ কয়েকটা ডার্বিতে যুবভারতীতে এমনই দৃশ্য দেখা গেল। এমনকী, আইএসএল ফাইনালেও প্রায় তেমনই দৃশ্য। ব্যাপারটা বেশ রহস্যজনক।
অবশ্য একটু তলিয়ে দেখলে তেমন রহস্য নেই। অঙ্কটা পরিষ্কার। রাজ্য সরকার বড় একটা অংশের টিকিট তুলে নিচ্ছে। সেগুলি ক্রীড়ামন্ত্রী নিজের এলাকায় বিলি করছেন। কাউন্সিলরদের দেওয়া হচ্ছে। আর এইসমস্ত কাউন্সিলরের আশেপাশে যাঁরা ঘুরে বেড়ান, তাঁরা আর যাই হোক, খেলা দেখার পাবলিক নন। তাঁরা প্রভাব খাটিয়ে টিকিট তুলছেন ঠিকই, তারপর পাড়ায় এঁকে–তাঁকে বিলি করছেন। এঁতে এলাকায় তাঁর প্রভাব বাড়ছে ঠিকই, কিন্তু ফ্রিতে এই টিকিট যিনি পাচ্ছেন, তিনি আর মাঠমুখো হচ্ছেন না। ফলে, গ্যালারি ফাঁকাই থাকছে। আবার অনেক টিকিট পরে বিলি করব ভেবে শেষমেশ আর বিলি করাও হচ্ছে না। আগেরবার ডার্বির সময় ক্রীড়ামন্ত্রীর দলীয় কার্যালয় থেকে টিকিট নেওয়ার লম্বা লাইনের ছবি ভাইরাল হয়েছিল। সেটা ছিল নেহাতই একটা প্রতীকী ছবি। মোদ্দা কথা, এভাবেই প্রকৃত ক্রীড়ানুরাগীদের হাতে না গিয়ে ভুলভাল লোকের হাতে টিকিট চলে যায়।
ইদানীং টিকিটের বড় একটা অংশ নাকি অনলাইনে বিক্রি হচ্ছে। অথচ, সেখান থেকেও পাওয়া যাচ্ছে না। যাঁরা চেষ্টা করছেন, অধিকাংশকেই হতাশ হতে হচ্ছে। বলা হচ্ছে, সব টিকিট নাকি বিক্রি। এদিকে, দুই ক্লাবের তাঁবুতেও টিকিটের জন্য দীর্ঘ লাইন। সদস্যরা দীর্ঘ ভোগান্তির পর হয়তো একটা টিকিট পাচ্ছেন। সমর্থকরা তো সেটাও পাচ্ছেন না। এত এত মানুষ, তাঁরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও টিকিট পাচ্ছেন না। অনেকেই এঁকে তাঁকে ধরছেন। কিন্তু তাঁরাও হাত তুলে জানিয়ে দিচ্ছেন, তাঁরা অপারগ।
কই, এমন হাহাকার তো কয়েক বছর আগেও ছিল না। যাঁরাই খেলা দেখতে চাইতেন, দেখতে পেতেন। ক্লাব থেকেও টাকা দিয়ে টিকিট কেনা যেত। আবার যুবভারতী থেকেও কেনা যেত। বিরাট যে লাইন পড়ত, তাও নয়। তাহলে হঠাৎ কি ফুটবল অনুরাগীর সংখ্যা বেড়ে গেল? দূরবর্তী জেলার লোকেদের কাছে অনলাইন টিকিট অবশ্যই একটা সুবিধার দিক। তাঁরা আগাম কেটে রেখে নিশ্চিন্ত হয়ে আসতে পারেন। কিন্তু কাউন্টারে অফলাইন টিকিটও চালু থাকুক। এত এত টিকিট ফুরিয়ে গেল। যাঁরা দেখতে চাইলেন, তাঁরা দেখতে পেলেন না। অথচ, গ্যালারিও ভরল না। আমার প্রস্তাব, অনলাইন কমিয়ে আগের মতো অফলাইন টিকিট বাড়ানো হোক। খেলার চার–পাঁচ দিন আগে থেকে টিকিট বিক্রি শুরু হোক। দেখবেন, সমস্যা অনেকটাই কমে গেছে। আবার গ্যালারিও ভরে উঠেছে।