‌বিদায়বেলায় কুমারেশকে মনে করিয়ে দিলেন মেহতাব

স্বনাম গুপ্ত

আজ ফুটবলকে বিদায় জানাচ্ছেন মেহতাব হোসেন। টানা ২১ বছরের খেলোয়াড়–‌জীবনের বিদায়লগ্ন। মেহতাবের থেকে বড় ফুটবলার হয়ত অনেকেই এসেছেন। কিন্তু বিদায়বেলাটা এত বর্ণময় আর কজনের হয়েছে?‌ ছোটখাটো দলের হয়ে নয়, ছোট খাটো মাঠেও নয়। মেহতাব বিদায় নিচ্ছেন মোহনবাগানের হয়ে, যুবভারতী থেকে। শুধু ফুটবলার হিসেবে নয়, শেষ ম্যাচে মেহতাবের হাতেই থাকবে নেতৃত্বের আর্মব্যান্ড।

mehtab
মোহনবাগানে সই করছেন মেহতাব।

 

মনে পড়ে যাচ্ছে এগারো বছর আগের কথা। ঠিক এভাবেই বিদায় নিয়েছিলেন ‌কুমারেশ ভাওয়াল। সেবার তাঁর হাতেই ছিল মোহনবাগানের আর্মব্যান্ড। তাঁর নেতৃত্বেই যুবভারতীতে লিগের শেষ ম্যাচে খেলেছিলেন বাইচুং, ব্যারেটোরাও। ম্যাচের শুরুতেই বিশেষ অনুষ্ঠান। বিদায়ী কুমারেশকে সবুজ মেরুণ উত্তরীয় পরিয়ে তাঁর হাতে পাল তোলা নৌকো তুলে দিয়েছিলেন মোহন–‌সচিব অঞ্জন মিত্র। কুমারেশ যখন মাঠ ছাড়ছেন, স্ট্যান্ডিং ওভেশন দিয়েছিল গ্যালারি। শুধু মোহানবাগান গ্যালারি নয়, সেদিন মহমেডান গ্যালারিতেও উঠেছিল হাততালির ঝড়।

kumaresh da2
সেই বিদায়ী ম্যাচে স্মারক হাতে কুমারেশ।

 

অবশ্য, কুমারেশের একটা বর্ণময় অতীত ছিল। দুই প্রধানের হয়ে যেমন দাপটের সঙ্গে খেলেছেন, তেমনি দেশের হয়েও খেলেছেন। এমন কৃতিত্ব হয়ত অনেক ফুটবলারেরই থাকে। কিন্তু কুমারেশের এমন দুটো কৃতিত্ব ছিল, যা কলকাতা ময়দানে আর কারও নেই। টানা সাতাশ বছর ধরে আই এফ এ–‌র নথিবদ্ধ ফুটবলার ছিলেন কুমারেশ। যে কৃতিত্ব কলকাতা ময়দানে আর কারও নেই। আর একটা কৃতিত্বের জন্য কলকাতা ফুটবলের ইতিহাসে তাঁর স্থায়ী আসন থেকে যাবে। সেটা হল গট আপের বিরুদ্ধে তাঁর দৃঢ় প্রতিবাদ। এই কলকাতা ময়দানে গট আপের দীর্ঘ ইতিহাস। বড় বড় ফুটবলার, ক্লাব, আই এফ এ, মিডিয়া–‌সবাই এর দার্শনিক প্রশ্রয়দাতা। কিন্তু কুমারেশ ভাওয়াল রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। নিজে আই এফ এ–‌কে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলেন, ইস্টার্ন রেল–‌পোর্ট ম্যাচটা গট আপ ছিল। তদন্ত কমিশন হোক। সেই চাপে পড়ে দুই অফিস ক্লাবকে সাসপেন্ড করেছিল আই এফ এ। গট আপের বিরুদ্ধে এত বলিষ্ঠ পদক্ষেপ আই এফ এ তার আগেও কখনও নেয়নি, পরেও নেয়নি। এই ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয়েছিল শুধুমাত্র কুমারেশ ভাওয়ালের জন্যই।

kumaresh da
এখন বাচ্চাদের নিয়ে কোচিংয়ে মগ্ন কুমারেশ।

 

এই সততা ও প্রতিবাদকে সম্মান জানাতেই তাঁকে মোহনবাগানে সই করানো হয়েছিল। লিগের শেষ ম্যাচে মহমেডানের বিরুদ্ধে এভাবেই তাঁকে বিদায় জানানো হয়েছিল। কুমারেশ খেলোয়াড় জীবনের শেষ ম্যাচ খেলেছিলেন মোহনবাগানের ক্যাপ্টেন হিসেবেই। এগারো বছর পর, যেন সেই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি। সেই কুমারেশ খেলোয়াড় জীবন থেকে সরে দাঁড়ালেও এখনও ফুটবলকেই আঁকড়ে আছেন। কলকাতা ময়দানে কোচিং করিয়েছেন। দশ বছর ধরে, প্রচারের আলো থেকে অনেক দূরে থেকে, বাচ্চাদের নিয়ে কোচিং করাচ্ছেন। এত এত প্রাক্তন খেলোয়াড়কে সম্মান জানানো হয়, খেলরত্ন বা এই জাতীয় এত সম্মান দেওয়া হয়। সাতাশ বছর ময়দানে খেলে নজির গড়া এই ফুটবলারের কথা কারও মনেও পড়ে না।
ঠিক এগারো বছর পর, মেহতাবের বিদায়লগ্নে কুমারেশের সেই বর্ণময় বিদায় যেন আবার পর্দায় ভেসে উঠল। ‌

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.