মায়ের মন
……………
জুয়েল মিয়াজি
হঠাৎ করে ছেলের উপর এভাবে রেগে যাওয়াটা মোটেই অযৌক্তিক হয়নি মায়ের। কারণ, সব মা–ই তো চায় ছেলে তার সুখে থাকুক, সুপথে থাকুক। কিন্তু গনেশ ছেলেটা বজ্জাতের হাড্ডি। সে তার বিধবা মায়ের কোনও কথায় কর্ণপাত করে না। প্রতিদিন ক্লাস ফাকি দিয়ে বাজে মেয়ে মানুষদের সঙ্গ দেওয়া তার নিত্য নৈমিত্তিক কাজে পরিণত হয়েছে। এছাড়া অারও অভিযোগ অাছে, গনেশ রোজ রোজ মদ জুয়ার অাড্ডায়ও সময় কাটায়। একমাত্র ছেলের এই বাজে কার্যকলাপ প্রতিবেশী মারফত শুনতে পেয়ে মালতী গনেশের উপর তীব্রভাবে ক্ষেপে যান। তাই মালতী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন গনেশেকে তিনি বাড়ি থেকে বের করে দেবেন। কিন্তু ছেলে বাড়ি থেকে চলে গেলে কষ্ট বেশি তিনিই পাবেন। তাই অামি তাকে বললাম, দেখ দিদি তুমি ছেলেটাকে এবারের মত মাপ করে দাও। এই ধরণের কাজ সে ভবিষ্যতে অার করবে না। কিন্তু দিদি অামার নাছোড়বান্দা! ছেলেকে তিনি শাস্তি দিয়েই ছাড়বেন। কিন্তু সমস্যা হল, ছেলে যদি রাগ করে বাড়ি থেকে চলে যায়। তবে দিদি আবার ছেলের চিন্তায় খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়বে। তাই অামি মালতী দিদিকে অাবারও বিনয়পূর্বক বললাম, মালতী দিদি তুমি এবারের মত ছেলেটাকে মাফ করে দাও। ও যদি রাগ করে চলে যায়, তবে তুমি কাকে নিয়ে বাচঁবে। মালতী দিদি অামাকে ধমক দিয়ে বলল, চুপ কর, হরিপদ। এই ধরণের কুলাঙ্গারের জন্য ওকালতি করতে অাসবি না তুই অামার কাছে। ওর মত কুলাঙ্গার ঘরে না থাকাই ভালো। অামি অাবারও বললাম, দিদি তুমি তোমার গনেশকে ছাড়া থাকতে পারবে না। অযথা রাগারাগি করো না। ওরে ক্ষমা করে দাও, দিদি। কিন্তু দিদির মন গললো না। দিদি পূর্বের সিদ্ধান্তে অটুট থেকে, ক্ষিপ্ত কন্ঠে বললেন, ওরে ছাড়াই অামি ভালো থাকতে পারমু। অবশেষে উপায় খুঁজে না পেয়ে গনেশ গৃহত্যাগ করল। এবং সেদিনের পর থেকে গনেশ লাপাত্তা । একসপ্তাহ পরের ঘটনা। সেদিন প্রত্যুষে অামি ঘুম থেকে উঠে বারান্দায় পায়চারি করতেছিলাম। হঠাৎ নজর করে দেখলাম যে মালতী দিদি দাওয়ায় বসে কাঁদতেছে। অামি জিজ্ঞেস করলাম কি গো দিদি কাদঁ কেন? মালতী দিদি ভাঙ্গা কন্ঠে বললেন, হরিপদ দেখ, পুকুরপাড়ের শিউলি গাছের পাশে একটি ছেলে সাদা রঙ্গের ডোরাকাটা শার্ট গায়ে দিয়ে দাড়িয়ে অাছে। অামি বললাম, তাতে তোমার কি? তুমি কাঁদছ কেন? দিদি কাঁদতে কাঁদতে বলল, অামার গনেশেরও এই ধরণের একটা ডোরাকাটা সাদা শার্ট অাছে।
(লেখক: জুয়েল মিয়াজি।। ছাত্র, ফোকলোর বিভাগ। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়। ত্রিশাল, ময়মনসিংহ। ই মেল: jewelmiajee777@gmail.com)
(আপনিও লিখতে পারেন অণু গল্প। পাঠিয়ে দিন আমাদের ঠিকানায়। শব্দসংখ্যা আনুমানিক ১৫০। সাধারণত শনি ও রবিবার প্রকাশিত হয় এই অণু গল্প। লেখা পাঠানোর ঠিকানা: bengaltimes.in@gmail.com)