বৃষ্টি চৌধুরি
শনিবার বের হল মাধ্যমিকের ফল। মঙ্গলবার উচ্চমাধ্যমিক। দুই ক্ষেত্রেই জেলার দাপট। আরও একটা মিল দেখতে পাচ্ছি। কৃতীরা প্রায় সবাই বলছে, তারা ডাক্তার হতে চায়। দু একজন বলছে ইঞ্জিনিয়ারিং। বাঙালির সম্পর্কে একটা দুর্নাম আছে, বাঙালি ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বাইরে কিছু ভাবতে পারে না। গড়পড়তা মা–বাবার মানসিকতা সেই খাতেই প্রবাহিত হয়। এখন দেখা যাচ্ছে, কৃতী ছাত্ররাও এই মানসিকতার বাইরে বেরিয়ে আসতে পারছে না। তাদেরও প্রথম পছন্দ সেই ডাক্তারি। অথবা ইঞ্জিনিয়ারিং।
নীরেন্দ্রনাথের অমলকান্তি রোদ্দুর হতে চেয়েছিল। এরা রোদ্দুর চায় না, ছায়াও চায় না। শিক্ষক বা উকিল হতে চায় না। সাংবাদিক বা লেখক হতে চায় না। রাজনীতিবিদ বা সমাজবিদ হতে চায় না। খেলোয়াড় বা গায়ক হতেও চায় না। অর্থনীতিবিদ বা কৃষিবিজ্ঞানী হতে চায় না। এরা চায় শুধু ডাক্তার হতে। মফসসলের বাবা–মায়েরাও কোনও ঈশ্বরী পাটনি নন। ছেলের দুধে–ভাতে থাকা তাঁদের কাম্যও নয়। হাসপাতালের বিরুদ্ধে, চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে তাঁদের এত অভিযোগ। সিস্টেমের বিরুদ্ধে এঁরা এত সোচ্চার। তবু ছেলেকে সেই ডাক্তারই বানাতে চান। গর্ব করে বলতে চান, আমার ছেলে ডাক্তার।
কিন্তু এই ডাক্তার হয়ে ছেলে কোথায় বসবে? গ্রামে দরিদ্র মানুষের সেবা করবে? নিশ্চিত থাকুন, এমনটা কেউই ভাবছেন না। তাঁরাও চান ছেলে অ্যাপোলো বা আমরিতেই বসুক। বা আরও বড়সড় কোনও হাসপাতালে। যেখানে অকারণে দশটা টেস্ট দেওয়া হবে। যেখানে ভয় দেখিয়ে দরকার না থাকলেও অপারেশন টেবিলে ঠেলে দেওয়া হবে। বোর্ডে স্ট্যান্ড করা কৃতীরাও কিন্তু গ্রামীণ হাসপাতালে চিকিৎসার কথা ভাবছে না। তাঁরাও ভাবছে এইসব ঝাঁ চকচকে হাসপাতালে বসার কথা। সারসত্যটা তারাও বুঝে গিয়েছে, ডাক্তারিতে অনেক টাকা। যারা এত এত নম্বর পেল, তারা যথেষ্ট মেধাবী, এই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। মেধাবী বলেই তারা সহজেই বোঝে, ডাক্তারের ওই সীমাহীন আয়ের উৎস কী। হ্যাঁ, তারপরেও তারা ডাক্তারই হতে চায়। সিস্টেম বদলের তাড়নায় নয়, সিস্টেমের সঙ্গে মিশে যাওয়ার তাড়নায়।
ডাক্তার ছাড়া আর কিছু ভাবতেই পারল না। বাবা–মায়ের গড়পড়তা মানসিকতার সঙ্গে এই তথাকথিত মেধাবীদের তফাত কোথায় রইল!