বাড়াবাড়ি করলেই আইপিএলে ঘ্যাচাং ফু

মুকুল বসু

আচ্ছা, এবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আয়োজক কারা ছিল?‌ উত্তর হল, পাকিস্তান। কিন্তু ভারত তো ট্রফি জিতল দুবাইয়ে। অনেক বছর পর যদি কেউ হিসেব মেলাতে যায়, নিশ্চিতভাবেই মিলবে না।

বহুকাল আগে অচলপত্রে দীপ্তেন্দ্র কুমার সান্যাল প্রশ্ন করেছিলেন, টাকা থাকলে কী হয়?‌ অন্যের উত্তরের অপেক্ষায় না থেকে নিজেই উত্তর দিয়েছিলেন, ‘‌ছবির পোস্টারে সত্যজিৎ রায়ের উপরে আর ডি বনশলের নাম থাকে।’‌ অর্থাৎ, প্রযোজকের নাম আগে, পরিচালকের নাম পরে।

ভারতীয় ক্রিকেটের সাম্প্রতিক দাদাগিরি দেখে সেই কথাগুলোই বেশি করে মনে পড়ে যাচ্ছে। আয়োজক পাকিস্তান। অথচ, ভারতের ইচ্ছে সবাইকে মেনে চলতে হবে। অন্যায় দাবি হলেও বলা যাবে না। কারণ, ভারতীয় বোর্ডের টাকা আছে। যা দিয়ে তারা আইসিসি–‌কে নিয়ন্ত্রণ করে। সব দেশের ক্রিকেট বোর্ডকে নিয়ন্ত্রণ করে।

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির অনেক আগে থেকেই বোর্ড বায়না জুড়ে বসল, আমরা পাকিস্তান যাব না। আমরা অন্য কোথাও খেলব। আইসিসি ভারতের মামাবাড়ির মতোই। তাই সব আবদার মেনে নেওয়া ছাড়া উপায়ই বা কী?‌ ভারত খেলবে দুবাইয়ে। তাই অন্য সব দেশকে উড়ে আসতে হবে দুবাইয়ে। এমনকী আয়োজক পাকিস্তানকেও দুবাইয়ে এসে ম্যাচ খেলতে হবে। ভারতের আবদার পূরণ যেন সবার কন্যাদায়।

আবদারের কি এখানেই শেষ?‌ যে কোনও টুর্নামেন্ট শুরুর আগে সব দেশের অধিনায়কদের নিয়ে ফটো সেশন হয়। এবারও তেমন আয়োজন ছিল। কিন্তু আমাদের অধিনায়ককে সে দেশে পাঠানো হবে না। বাকি সব অধিনায়ককে নাকি দুবাই উড়ে আসতে হবে। শেষমেশ, এত বড় মাপের টুর্নামেন্ট, তার কোনও উদ্বোধনই হল না।

আয়োজক যখন পাকিস্তান, তখন আম্পায়ারদের সেখানেই খেলাতে যেতে হবে। কিন্তু ভারতের আম্পায়ার বলে বসলেন, তিনি পাকিস্তানে যাবেন না। আর সেটা কিনা ঘোষণা করা হচ্ছে বোর্ডের সরকারি এক্স হ্যান্ডল থেকে। অর্থাৎ, আম্পায়ার, ম্যাচরেফারি, ধারাভাষ্যকাররা যাবেন কিনা, সেগুলোও বোর্ড ঠিক করে দেবে। এর অন্যথা হওয়ার উপায় নেই। আপনার গর্দান হয়তো যাবে না। কিন্তু নানা দিক থেকে নানা ভাতা বা সাহায্য বন্ধ হয়ে যাবে। ‘‌দেশদ্রোহী’‌র তকমা পড়ে যাবে।

সেমিফাইনালে ভারতের সামনে কারা?‌ শেষ ম্যাচে ভারত যদি জেতে, তাহলে সামনে অস্ট্রেলিয়া। আর ভারত যদি হারে, তাহলে সামনে দক্ষিণ আফ্রিকা। হুকুম হল, দুই দলকেই পাকিস্তান থেকে দুবাইয়ে উড়িয়ে আনো। যারা ভারতের বিরুদ্ধে খেলবে, তারা থেকে যাবে। আর অন্য দল আবার পাকিস্তানে ফিরে যাবে। বেচারা দক্ষিণ আফ্রিকা। ম্যাচ খেলার পরেরদিনই তাদের উড়িয়ে আনা হল দুবাইয়ে। ক্রিকেটাররা বসে রইলেন। তাকিয়ে রইলেন ভারতের ম্যাচের দিকে। যখনই জানা গেল, তাদের খেলা পাকিস্তানে, তখন আবার উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হল পাকিস্তানে। এমন খামখেয়ালিপনার পরেও বলার উপায় নেই। প্রতিবাদ জানানোর উপায় নেই। কারণ, ভারত যা চাইবে, তাই হবে।

পাকিস্তান আয়োজক। নিয়ম অনুযায়ী আইসিসি–‌র চেয়ারম্যানের সেই দেশে যাওয়া উচিত। কিন্তু অমিত শাহর পুত্র যদি আইসিসি চেয়ারম্যান হন, তাহলে তো মুশকিল। তিনি আর কী করে যান!‌ অতএব, আইসিসি চেয়ারম্যান ছাড়াই করতে হল চ্যাম্পিয়ন্স লিগ। অথচ, তিনি দুবাই আলো করে রইলেন। ফাইনালে ছবি তোলার কোনও সুযোগ ছাড়লেন না।

এমনিতেই টাকা দিয়ে ভারত অনেক প্রশ্ন ধামাচাপা দিয়ে দিয়েছে। আর চ্যাম্পিয়ন হলে তো কথাই নেই। দেখো, আমরাই সেরা। অতএব, আমরা যা চাইব, তাই হবে। বেশি বাড়াবাড়ি করলে আইপিএলে ঘ্যাচাং ফু করে দেব।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.