রক্তিম মিত্র
বেশ কয়েক মাস ধরে চলছে জল্পনাটা, অভিষেক কি নতুন দল গড়ছেন? মাঝে মাঝেই শোনা যায়, তিনি নাকি দলের মধ্যে বিদ্রোহী। নিজেকে গুটিয়ে রেখেছেন। ভেতরে ভেতরে অন্য কিছু ভাবছেন।
কবে দল ঘোষণা হবে, এমন জল্পনাও উঠে এসেছে মিডিয়ায়। কাঁরা তাঁর দিকে থাকতে পারেন, এমন কিছু নামও ভেসে উঠেছে বারবার। কোথায় তাঁর ছবি আছে, কোথায় ছবি নেই, তা নিয়ে জল্পনাও কম হয়নি।
সত্যিই কি তিনি দল গড়ছেন? এই মুহূর্তে এমন কোনও সম্ভাবনা নেই। তবে নানা কারণে তিনি যে ক্ষুব্ধ, তাঁর ওপর দলের সর্বময়ী নেত্রীও যে কিছুটা ক্ষুব্ধ, এটাও ঘটনা। আসলে, মমতা ব্যানার্জি এখনই ক্ষমতার রাশ ছাড়তে চান না। এদিকে, অভিষেকেরও আর তর সইছে না। প্রায় দশ বছর ধরে ‘যুবরাজ’ তকমা বয়ে বেড়াচ্ছেন। এবার একটু ‘সাবালক’ হতে চাইছেন।
বেশ কয়েক বছর ধরেই দলের নিয়ন্ত্রণ অনেকটাই ‘ভাইপো’র হাতে ছাড়া ছিল। তিনি নিজের মতো করে কাউকে কোণঠাসা করেছেন, কাউকে সামনে এনেছেন। জেলায় জেলায় অনুগামী বাহিনী তৈরি করেছেন। এমনকী প্রশাসনকেও নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেছেন। নিন্দুকেরা বলেন, কোন জেলায় কে এসপি হবেন, তিনি ঠিক করেন। আর এইসব করতে করতেই প্রবল উচ্চাকাঙ্খী হয়ে উঠবেন, সেটাই স্বাভাবিক।
একজন রাজনীতিবিদের উচ্চাকাঙ্খা থাকবে, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এমন এমন কাণ্ডে তাঁর নাম জড়িয়েছে, তাঁকে কতখানি রাজনীতিক আর কতখানি দুষ্কৃতি বলা যায়, তা নিয়ে জোর তর্ক হতে পারে। সিবিআই বা ইডি তাঁকে তেমন ঘাঁটায় না। কেন ঘাঁটায় না, সেটাও দুর্বোধ্য নয়। সহজ কথা, রাজ্যে যেমন পিসি আছেন, দিল্লিতেও কিছু ‘মামা’ আছেন।
কিন্তু যাঁর বলে বলীয়ান, তাঁর কর্তৃত্বকে যদি চ্যালেঞ্জ করতে যান, তাহলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে। ভেবে বসেছিলেন, তিনি বিরাট জননেতা। ভেবে নিয়েছিলেন, তাঁর অনুগামী বিধায়ক, সাংসদরা তাঁর দিকেই থাকবেন। কিন্তু গত কয়েকমাসে সারসত্যটা তিনি অন্তত হাড়ে হাড়ে বুঝেছেন। একসময় যাঁদের অনুগামী মনে হত্, তাঁরা এখন পিসির সুরেই গাইতে শুরু করে দিয়েছেন। এখন আর তাঁর নামের আগে ‘সেনাপতি’ শব্দটা সেভাবে শোনা যায় না। তাঁকে ঘিরে ছবির সেই ছয়লাপও থাকে না।
নেত্রীও বুঝিয়ে দিতে চান, তিনিই সব। এর বাইরে কারও কোনও অস্তিত্ব নেই। দলীয় সভায় হোক, বিধানসভায় হোক, তিনি প্রমাণ করেই ছাড়ছেন। এতদিন ক্ষমতার সমান্তরাল কেন্দ্র হয়ে ওঠা ভাইপোর পক্ষে হজম করা একটু কঠিন তো বটেই। পিসি পাশে না থাকলে তিনি যে আসলে কেউ নন, সেটা তাঁর দলের লোকেরাই বেশ ভালভাবে তাঁকে বুঝিয়ে দিয়েছেন।
মনে মনে ক্ষুব্ধ হতেই পারেন। কিন্তু কিছুই করার নেই। অপমানিত হয়েও দলেই থাকতে হবে। হাতে পুলিশ না থাকলে, পাশে পিসি না থাকলে তাঁর কোনও মূল্যই নেই, গত কয়েক মাসে এটুকু অন্তত প্রমাণিত। এতদিন যাঁরা গ্যাস দিতেন, তাঁরা কী বেমালুম কেটে পড়েছেন। স্বপ্নের উড়ান থেকে আপাতত বাস্তবের রুক্ষ মাটিতে। তিনি নিছক একজন সাংসদ, এই তকমা নিয়েই আপাতত ঘাপটি মেরে থাকতে হবে। পরে ‘সুসময়’ আসতেই পারে। আবার সর্বেসর্বা হয়ে উঠতেই পারেন। কিন্তু আপাতত অচ্ছুৎ হয়েই থাকতে হবে।