‌হার্দিক, তোমার হৃদয় নাই

অজয় নন্দী

বড় গায়কের আগে গাইতে ওঠার একটা বিড়ম্বনা থাকে। একেকটা গান হয়, আর জোর হাততালি পড়ে। গায়ক ভেবে নিতেই পারেন, সবাই হয়তো তাঁর গানের তারিফ করছেন। আসলে, দর্শক বলতে চাইছেন, অনেক গেয়েছো বাবাজীবন। এবার মানে মানে কেটে পড়। যার গান শুনতে এসেছি, তাকে পাঠিয়ে দাও।

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হার্দিক পান্ডিয়ার হয়েছিল সেই দশা। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কেউ চার মারলে গ্যালারি উত্তাল হয়ে উঠবে, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যেই না তিনি চার মারলেন, গ্যালারি যেন উল্টো সুরে গাইতে লাগল। হিসেবটা পরিষ্কার। তখনও প্রায় এগারো ওভার বাকি। এদিকে রান বাকি বড়জোর ২০। কিন্তু মুশকিলটা হল, বিরাট কোহলিকে যদি সেঞ্চুরি করতে হয়, তাহলে আরও ১৫ রান করতে হবে।

তার আগেই হার্দিক বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ফেলেছেন। ছুটে দু’‌রানও নিয়েছেন। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচ বলে কথা। দু একটা চার–‌ছয় না মারলে ইজ্জত থাকে না। গ্যালারি যেন হার্দিককে বলতে চাইছে, এখনও দশ ওভার বাকি। তোমাকে কে এত পাকামি করতে বলেছে। এত যদি রান করার শখ, অন্য ম্যাচে তোমার কেরামতি দেখিও।

এমন সময় হার্দিক আউট। না, তখন হারার আশঙ্কা ছিল না। ফলে, কোনও উদ্বেগ নয়, কোনও দীর্ঘশ্বাসও নয়। গ্যালারিতে বা টিভির সামনে যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস। ফিরে আসার সময় সে কী হাততালি। বড় গায়কের আগে গাইতে ওঠা গায়ককে যেভাবে হাততালি দিয়ে থামিয়ে দেওয়া হয়, অনেকটা সেইরকম। দুটো শব্দে বঙ্গানুবাদ করলে, মানে দাঁড়ায় ‘‌আপদ বিদেয়’‌।

একটা সময় এমন এল, যখন জেতার জন্য ভারতের দরকার ২। কিন্তু সেঞ্চুরির জন্য কোহলির দরকার ৪। মোদ্দা কথা, চার বা ছয় মারতে হবে। তা হলে দুই কুলই রক্ষা হবে। সেটাই হল। যেন চিত্রনাট্য মেনেই মধুরেণ সমাপয়েত। কিন্তু যদি হার্দিক আউট না হতেন, যদি ‘‌প্রতিভা মেলে ধরতে গিয়ে’‌ আরও একটা চার বা ছয় মেরে ফেলতেন, বিরাটের বিক্রমে কোথায় যেন একটা ফাঁক থেকে যেত। এমন একটা ইনিংস, শতরান না পেলে ঠিক পোয়েটিক জাস্টিস হত না। নিশ্চিত থাকুন, হার্দিক তখন জাতীয় খলনায়ক হয়ে যেতেন। ভাগ্যিস, তিনি আউট হয়েছেন। নইলে, হয়তো আওয়াজ উঠত, হার্দিককে পাকিস্তানে পাঠিয়ে দাও।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.