বইমেলা এলেই একটা কথা হাওয়ায় ভেসে বেড়ায়। কোন স্টলে ডিসকাউন্ট কত? কেউ কেউ বলেন, কলেজ স্ট্রিটে কুড়ি পার্সেন্ট ডিসকাউন্ট দেয়, বইমেলায় দশ কেন হবে? মোদ্দা কথা, বইমেলায় ডিসকাউন্ট বাড়াতে হবে।
আসলে, কেউ কেউ বইকেও চৈত্রসেলের জামাকাপড়ের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলেন। সোশ্যাল মিডিয়া আসার পর আজগুবি সব দাবি যেন বেড়ে গেছে। বই সংক্রান্ত নানা গ্রুপ রয়েছে। সেইসব গ্রুপে কিছু মননশীল পাঠক নিশ্চয় আছেন। কিন্তু সেইসব গ্রুপের অধিকাংশ সদস্যের আলোচনা দেখে মনে হয়, বইয়ের সঙ্গে এঁদের বিশেষ সদ্ভাব নেই। রান্নার গ্রুপেও আছেন, বেড়ানোর গ্রুপেও আছেন, বইয়ের গ্রুপেও না থাকলে প্রেস্টিজ থাকে না। আর গ্রুপগুলিও সদস্য সংখ্যা বাড়ানোর জন্য এইসব লোকেদের যুক্ত করে। এতে সেইসব গ্রুপের আসল উদ্দেশ্যটাই ব্যহত হয়। বই নিয়ে সুস্থ ও গঠনমূলক আলোচনা গৌণই থেকে যায়।
এঁদের আলোচনা শুনলে মনে হয়, একটু ডিসকাউন্ট বাড়িয়ে দিলেই এঁরা বুঝি বই কিনে আলমারি ভর্তি করে ফেলবেন। নেহাত ডিসকাউন্ট কম বলে কিনতে পারছেন না। স্বাভাবিক যুক্তি বলে, ডিসকাউন্ট বেশি থাকলে যিনি দশটা বই কিনতেন, কম থাকলে তিনি পাঁচটা তো কিনবেন। কিন্তু সারা বছরে হয়তো একটা বইও পড়েননি। অথচ, মতামত দেওয়ার বেলায় দারুণ সক্রিয়।
আসলে, এইসব ভুয়ো পাঠকদের জন্য ভুগতে হচ্ছে সত্যিকারের পাঠকদের। কোনও কোনও প্রকাশন সংস্থা বইয়ের দাম দ্বিগুণ/তিনগুণ বাড়িয়ে দিচ্ছে। ধরা যাক, তিন বছর আগেও যে বইয়ের দাম ছিল দুশো টাকা, সেই বইয়ের নতুন প্রিন্টে হঠাৎ দেখা যাচ্ছে পাঁচশো টাকা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দাম বাড়বে, সেটা স্বাভাবিক। কিন্তু তিন বছরের মধ্যে আড়াই গুণ! পাঁচশো টাকা দাম রেখে যদি কেউ পঁচিশ শতাংশ ছাড় দেয়, তাহলে মূল্য দাঁড়ায় ৩৭৫। আর আড়াইশো টাকার বইয়ে যদি দশ পার্সেন্ট ছাড় দেওয়া হয়, তাহলে দাম দাঁড়ায় ২২৫। তাহলে কোনটা বেশি হল?
যিনি ৩৭৫ টাকা দিয়ে কিনলেন, তিনি ভাবলেন ২৫ পার্সেন্ট ডিসকাউন্ট পেলাম। আর যিনি ২২৫ টাকা দিয়ে কিনলেন, তিনি ভাবলেন, মাত্র দশ পার্সেন্ট ডিসকাউন্ট পেলাম। মাঝখান থেকে ভুগতে হয় সত্যিকারের বইপ্রেমী মানুষদের। তাঁদের ২২৫ টাকার বই ৩৭৫ টাকায় কিনতে হয়।
তাই দোহাই, বইকে চৈত্র সেলের পর্যায়ে নামিয়ে আনবেন না। ডিসকাউন্ট ডিসকাউন্ট করে চিৎকার করে দুশোর বইকে পাঁচশো টাকায় নিয়ে যাবেন না।