আর কবে তালা ঝুলবে সিবিআই দপ্তরে!‌

রক্তিম মিত্র

বাঙালি রাগ করতে ভুলে গেছে। বাঙালি গর্জে উঠতে ভুলে গেছে। তার যত গর্জন, ওই ফেসবুকেই।

কয়েক মাস আগের কথা। উত্তাল হয়ে উঠেছিল রাজপথ। একটাই স্লোগান, জাস্টিস ফর আর জি কর। শহর থেকে গ্রাম ছড়িয়ে পড়ছিল দাবানলের মতো।

কয়েক মাস যেতে না যেতেই স্বাভাবিক নিয়মেই সেই আন্দোলন স্তিমিত হয়ে এল। পৃথিবী আবার সেই নিজের চেনা কক্ষপথেই ঘুরতে লাগল।

বেচারা সঞ্জয় রায়। একা তাকেই সাজা শোনানো হল। বাকি সবাই বহাল তবিয়তে।

অনেকে হয়তো অবাক হচ্ছেন। কিন্তু এটাই তো হওয়ার ছিল। মামলা যখনই সিবিআই–‌এর হাতে গেছে, তখনই জানা ছিল, এই তদন্ত আসলে অশ্বডিম্ব প্রসব করবে। থানার এক নিতান্ত অপদার্থ কনস্টেবল যা করতে পারে, সিবিআই নামক সংস্থা সেটুকুও পেরে ওঠে না। হ্যাঁ, সিবিআই–‌কে যাঁরা চালান, তাঁরা সিবিআই–‌কে এই জায়গাতেই নামিয়ে এনেছেন।

এরপরেও সিবিআই–‌এর হয়ে, কেন্দ্রের হয়ে দালালি করার লোক পাওয়া যায়। অনেকে বলবেন, প্রমাণ লোপাট হয়ে গেছে। সিবিআই সব প্রমাণ হাতে পায়নি। পাঁচ মাস পেরিয়ে যাওয়ার পর যেন বিরাট তত্ত্ব আবিষ্কার করলেন!‌

প্রমাণ লোপাট কারা করেছে?‌ কেন করেছে?‌ অপরাধী প্রমাণ লোপাট করতে চাইবে, সেটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু পুলিশ সেই প্রমাণ লোপাট করার সাহস পায় কোত্থেকে?‌ কারণ, পুলিশ জানে, সিবিআই একটি আস্ত অপদার্থ। অতীতেও তারা কিছুই করতে পারেনি, ভবিষ্যতেও পারবে না। সিবিআই যে সত্যিই কত বড় অপদার্থ, তারা নিজেরা আবার প্রমাণ করে দিল। তারা অন্যের অপরাধ প্রমাণ করতে পারুক আর নাই পারুক, নিজেদের অপদার্থতা প্রমাণ করায় তারা সিদ্ধহস্ত। অন্তত বাংলার নিরিখে এই ব্যাপারে তাদের সাকসেস রেট একেবারে একশো পারসেন্ট।

আসলে, একজন আরেকজনের অপদার্থতা সম্পর্কে প্রচণ্ড আস্থাশীল। অপরাধী জানে, পুলিশ কিছু করতে পারবে না। পুলিশ জানে, সিবিআই কিছু করতে পারবে না। সিবিআই জানে, আদালত কিছু করতে পারবে না। আদালত জানে, সরকার কিছু করতে পারবে না। সরকার জানে, জনতা কিছু করতে পারবে না। আচ্ছা, এমন একটা স্পর্শকাতর মামলা, সিবিআই চাইলেই বুঝি তার গতি শ্লথ করে দিতে পারে!‌ ওপর তলা থেকে নির্দেশ না এলে সিবিআই কর্তাদের বাবার ক্ষমতা ছিল এভাবে অশ্বডিম্ব প্রসব করার!‌

এরপরেও এই সিবিআই–‌কে দেখে ঘৃণা হয় না!‌ এরপরেও সিবিআই দপ্তরে তালা ঝুলিয়ে দিতে ইচ্ছে করে না?‌ অপরাধীদের বিচার পরে হবে। আগে এই অপদার্থ তদন্তকারীদের বিচার হোক। যে বিচারপতি সুয়োমোটো মামলা হাতে নিয়ে মামলাকে ধর্ষণ করলেন, সেই বিচারপতির বিচার হোক। নিশ্চিত থাকুন, এই বিচারপতি প্রোমোশনাল পোস্টিং পেলেন বলে!‌ শুধুমাত্র নিজেদের ক্ষমতা মসৃণ রাখতে যাঁরা সিবিআই–‌কে চালান, সেই ‘‌বীরপুরুষ’দের ঘৃণা করতে শিখুন।

সঞ্জয় রায় শুধু একজন মহিলাকে ধর্ষণ করেছেন। এই ‘‌প্রভাবশালী’‌রা দেশের সংবিধান, বিচার থেকে শুরু করে আপনার–‌আমার বিশ্বাসকে ধর্ষণ করেছেন। ঘৃণা যদি করতে হয়, এঁদের করুন। ‌

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.