ধীমান সাহা
কোনও একটা মামলায় সিবিআই তদন্ত দেওয়া হলেই টিভিতে সে কী চিৎকার! যেন বিরাট এক ব্রেকিং নিউজ। যেন, এই সমাধান হয়ে গেল।
পরের দিন থেকে শুরু হয়ে যায় বিরাট এক তৎপরতা। আজ সিবিআই এর বাড়িতে গেল। এত ঘণ্টা জেরা করল। বাড়ির বাইরে থেকে চলে রোমহর্ষক লাইভ কমেন্ট্রি।
আজ সিবিআই অমুক লোককে ডেকে পাঠাল। এখনও জেরা চলছে। কত ঘণ্টা হল? ভেতরে কী কী প্রশ্ন করা হতে পারে। তবে কি গ্রেপ্তার করা হতে পারে? সূত্রের খবর, সিবিআই বেশ কিছু ব্যাপারে অসঙ্গতি পেয়েছে। এবার সিবিআই আসল মাথাদের দিকে এগোচ্ছে। এবার সিবিআই তদন্তের জাল গুটিয়ে আনছে।
ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি।
এসব শুনে শুনে কান পচে গেছে। বছরের পর বছর একই সস্তা নাটক দেখে আসছি। সিবিআই বারবার আদালতে বলে যায়, মাই লর্ড, উনি প্রভাবশালী, তথ্য প্রমাণ লোপাট করতে পারেন। আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা দরকার।
তারপর নিশব্দে সিবিআই হেফাজত থেকে জেল হেফাজতে। অর্থাৎ, রাজ্যের আতিথেয়তায়। কেউ কেউ জেল থেকে উডবার্ন ওয়ার্ড নামক পিজির অতিথিশালায়। এটাই বছরের পর বছর দেখে আসছি। সিবিআই বহু যুগ পরে একটা চার্জশিট পেশ করে। যাতে কার্যত কিছুই থাকে না। বিস্তর তদন্তের পর যা কার্যত পর্বতের মূষিক প্রসব। সেই ধৃত ব্যক্তি কোথায় আছে, সিবিআই আর খোঁজও রাখে না। একসময় স্বাভাবিক নিয়মেই জামিন হয়ে যায়। বেরিয়ে এসে বীরদর্পে সেই জামিন পাওয়া অবতার বলে ওঠেন, ‘সত্যের জয় হল। প্রমাণ হল, আমি নির্দোষ।’
এসব দৃশ্য যখন দেখি, তখন সেই অভিযুক্তদের ওপর আর রাগ হয় না। বরং, এটাই স্বাভাবিক দৃশ্য বলে মনে হয়। সারদা থেকে এসএসসি। কয়লা থেকে আরজি কর। প্রায় সবক্ষেত্রেই একই ঘটনার চর্বিত চর্বণ। বিচারের নিষ্পত্তি তো দূরের কথা, বিচার প্রক্রিয়াই শুরু হয় না। আরজি কর মামলায় ট্রায়াল যদিও বা হল, বিচারের নামে যা হল, তা প্রহসন বললে কম বলা হয়।
আসলে, তদন্ত সিবিআই এর হাতে গেলে যে কোনও অপরাধী পরম নিশ্চিন্তে থাকে। সে জানে, সিবিআই কতখানি অপদার্থ। সে জানে, তার কিস্যু হবে না।
আগেই জানা ছিল, এক্ষেত্রেও পর্বতের মুষিক প্রসবই হবে। প্রায় দু’মাস তদন্ত করে যে চার্জশিট জমা দিল, তাকে মূষিক প্রসব ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না। প্রধান বিচারপতি বলেছিলেন, রিপোর্ট নাকি চাঞ্চল্যকর। এই তার নমুনা! বলা হল, এরপর নাকি সাপ্লিমেন্ট চার্জশিট দেওয়া হবে। এমন হাবভাব, যেন তাতে বিরাট কিছু থাকবে। নব্বই দিন পেরিয়ে গেল। সেই চার্জশিট আর দেওয়াই গেল না। তদন্তকে ঠান্ডা ঘরে পাঠানোর জন্য যা যা করা দরকার, সিবিআই কর্তারা ঠিক সেটাই করেছেন।
অনেককে বলতে শুনি, সিবিআই–এর ওপর আস্থা আছে। সুপ্রিম কোর্টের ওপর আস্থা আছে। এর চেয়ে ভন্ডামি আর কিছু হয় না। কেন আস্থা আছে, বুঝি না। লোকদেখানো দু একটা চুনোপুঁটি ধরা আর গ্যালারি শো করা ছাড়া আস্থা অর্জনের জন্য সিবিআই কী এমন করেছে? কেন আমরা জোর গলায় বলতে পারি না, সিবিআই–এর প্রতি এতটুকুও আস্থা নেই। সিবিআই আগে আস্থার যোগ্য হয়ে উঠুক।
একটা প্রতিষ্ঠানের নানা সীমাবদ্ধতা থাকে। কখনও সাফল্য আসে, কখনও আসে না। কিন্তু এমন সীমাহীন ব্যর্থতা এই দেশে আর কোনও প্রতিষ্ঠানের আছে বলে মনে হয় না।
দয়া করে সেটিং–সেটিং করে চিৎকার করবেন না।
এই আপনিই কিন্তু কোনও একটা ঘটনায় সিবিআই তদন্তের রায়ে দিলে উল্লসিত হয়েছেন।
দোষটা তাঁদের নয়। দোষটা আসলে আপনার। গত কয়েকবছরের এত ঘটনাক্রম দেখেও যদি সিবিআই নামক বস্তুটির ওপর ভরসা থেকে থাকে, তাহলে সেই দায় একান্তই আপনার।
শিক্ষা হয়েছে তো? যদি হয়ে থাকে, তাহলে আর সিবিআই–সিবিআই করে দাঁত কেলিয়ে চিৎকার করবেন না।