দৃশ্য এক
তখন নিষিদ্ধ হয়ে গেছে কমিউনিস্ট পার্টি। কেউ কেউ গ্রেপ্তার। কেউ এখানে ওখানে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। কিছুতেই ধরা যাচ্ছে না বিরোধী দলনেতা জ্যোতি বসুকে। কোথায় তিনি?
একদিন পুলিশকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায় কিছুটা ধমকের সুরেই জানতে চাইলেন, কোথায় পালিয়ে বেড়াচ্ছে জ্যোতি? ওকে ধরা যাচ্ছে না কেন? যেভাবেই হোক, ওকে ধরতে হবে।
শুনেই এক পুলিশকর্তা মুচকি হেঁসে ফেললেন। বিধান রায় জিজ্ঞেস করলেন, কী হল? হাসছো কেন? এতে হাসির কী হল? জ্যোতিকে ধরা যাচ্ছে না কেন, সেটা জানতে চাইছি।
তখন সেই পুলিশকর্তা বললেন, স্যার, উনি এমন এক জায়গায় আছেন, যেখান থেকে ধরা যাবে না।
বিধানবাবু জানতে চাইলেন, কোথায় আছে?
সেই পুলিশকর্তা তখন বিধান রায়ের বাড়ির ঠিকানা বললেন।
কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে বিধান রায় বললেন, ও, তাই নাকি ? তাহলে থাক। ধরার দরকার নেই।
****
দৃশ্য দুই
এবার নবান্নে বৈঠক। সরাসরি টিভিতে। মাঝে মুখ্যমন্ত্রী। বাঁ দিকে মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ, রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার। ডানদিকে, কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়।
কীভাবে আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে আনা যায়, কীভাবে আলু রপ্তানিতে লাগাম টানা যায়— এই ছিল আলোচনার বিষয়। সেখান থেকে হঠাৎ করে ঢুকে পড়লেন কয়লায়। ক্যামেরার সামনে কার্যত কাঠগড়ায় তুললেন পুলিশকে। পুলিশের নিচুতলার কিছু লোক নাকি কয়লা পাচারে সাহায্য করছে। সেই কারণেই নাকি তৃণমূলের খুব বদনাম হয়ে যাচ্ছে। কারা কয়লা পাচার করছে, খুঁজে বের করতে বললেন।
মুখ্যসচিব থেকে ডিজি, দুজনেই ইয়েস ম্যাডাম, ইয়েস ম্যাডাম করে গেলেন। তাঁরা কার্যত মেনে নিলেন, পুলিশের নিচুতলাই কয়লা পাচার করছে।
***
সেদিন বিধান রায় জানতে চাইলেন, জ্যোতি কোথায়, খুঁজে বের করো।
এদিন তিনি বললেন, কয়লা পাচার কারা করছে, খুঁজে বের করো।
**
সেদিন পুলিশ কর্তারা বলতে পেরেছিলেন, উনি আনপার বাড়িতেই লুকিয়ে আছেন, তাই আমরা গ্রেপ্তার করতে পারছি না।
এদিন পুলিশ কর্তারা এই সহজ সত্যিটা বলতে পারলেন না। তফাত শুধু এই টুকুই।