অজয় নন্দী
দীর্ঘদিন তিনি ভারতীয় ক্রিকেটের মূলস্রোতে নেই। আইপিএলে তাঁকে কেউ ডাকে না। নিলামে উঠলেও আনসোল্ড থেকে যান। একশোর ওপর টেস্ট খেলেছেন। তারপরও তিনি তারকা নন। দল নির্বাচনের সময় তাঁর নাম মনেও পড়ে না। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া সফরের আগে ঘুরেফিরে আসছে তাঁর নামটা। তিনি চেতেশ্বর পুজারা।
আগের দুটি সফরেই ব্যাট হাতে দারুণ ভূমিকা পালন করেছিলেন এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান। ব্যাট হাতে কত রান করেছেন, তার থেকেও বড় কথা, বিপক্ষের বোলারদের অনেকটা নির্বিষ ও হতোদ্যম করে দিচ্ছেন। যার সুফল পাচ্ছেন অন্য ব্যাটসম্যানরা।
ছোট থেকেই শুনে আসছি, টেস্ট ক্রিকেটের আসল কথা হল ধৈর্য। কিন্তু এখনকার ভারতীয় দলকে দেখে মনে হয়, সবই আছে, শুধু ধৈর্যটাই নেই। আইপিএলের আবহে এমন একটা পরিবেশ তৈরি হয়েছে, তিন–চারটে বল ঠেকানোর পরেই মনে হচ্ছে, এবার একটা ছয় মারা যাক। আইপিএলের ছোট মাঠে ছয় মারা আর টেস্টে ছয় মারার মধ্যে তফাত অনেকটাই। এই সহজ সত্যিটাই অনেকে বোঝেন না। ফলে, কার্যত উইকেট উপহার দিতে হচ্ছে। পুজারা থাকলে অন্তত এই ধৈর্য নিয়ে প্রশ্ন উঠত না। তিনি জানেন, কীভাবে উইকেট আঁকড়ে থাকতে হয়। উইকেটে পড়ে থাকলে রান ঠিক আসবেই। উপকৃত তিনি একা হননি, অন্যরাও হয়েছেন। বিপক্ষের বোলাররা তাঁকে আউট করতে না পেরে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। সেই সুযোগে অন্য ব্যাটসম্যানরা নিজেদের সেট করার আরও বাড়তি সময় পাচ্ছেন।
সম্প্রতি অস্ট্রেলীয় জোরে বোলার জস হ্যাজেলউড বলেছেন, ‘এবার পুজারা নেই, এটা আমাদের কাছে বিরাট স্বস্তির। ওকে আউট করা খুব মুশকিল। ওর উইকেট কখনও উপহার হিসেবে পাওয়া যেত না। অনেক কষ্ট করে অর্জন করতে হত।’ বিপক্ষের বোলার বুঝলেন। অথচ আমাদের নির্বাচকরা এই সারসত্যটা বুঝলেন না। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে এমন বিপর্যয়ের পরেও কেন পুজারার কথা মনে পড়ল না, সেটা ভেবে অবাক হচ্ছি। যদি গত পাঁচ বছরের কথা ধারেন, বিরাট কোহলি বা রোহিত শর্মাদের চেয়ে তাঁর ট্র্যাক রেকর্ড অনেক ভাল। তারপরেও বিরাট–রোহিতরা টিমে থাকবেন, কিন্তু পুজারার জন্য দরজা বন্ধ, এ কেমন ন্যায়বিচার! শুধু তিনি তারকা নন বলে! শুধু সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর কোটি কোটি ফলোয়ার নেই বলে! প্রশ্ন কিন্তু থেকেই গেল। আমি নিশ্চিত, অস্ট্রেলিয়া সফরের পর এই প্রশ্নটা আরও জোরালো হয়ে উঠবে।