এত বিদ্রোহ কখনও দেখেনি কেউ
দিকে দিকে ওঠে অবাধ্যতার ঢেউ।
স্বাধীনতা দিবসের ঠিক আগের রাত। উত্তাল হয়ে উঠল কলকাতা। উত্তাল হয়ে উঠল সারা বাংলা। একটাই স্লোগান, ‘জাস্টিস ফর আরজি কর’। কোনও রাজনৈতিক দল নয়। কোনও সংগঠনিত জমায়েত নয়। এক সুরে গর্জে উঠেছিল কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপ।
এবার সেই ঢেউ আছড়ে পড়তে চলেছে খেলার মাঠেও। রবিবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে ডুরান্ড কাপের ডার্বি। এই ডার্বির কত আঙ্গিক। কেউ বলেন, ঘটি বনাম বাঙালের লড়াই। কেউ বলেন চিংড়ি বনাম ইলিশ। কেউ বলেন নৌকো বনাম মশাল। রঙের লড়াই হিসেবে দেখতে গেলে, সবুজ–মেরুন বনাম লাল–হলুদ। কয়েকদিন আগে থেকেই শুরু হয়ে যায় সেই হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আবহ।
কিন্তু এবার কোথাও যেন এক সুর শোনা যাচ্ছে দুই শিবিরেই। একটা ময়দানি স্লোগান ছড়িয়ে গেছে এর মধ্যেই, ‘গ্যালারিতে এক স্বর, জাস্টির ফর আর্জি কর।’ সোশ্যাল মিডিয়ায় দুই ক্লাবেরই রয়েছে বেশ কয়েকটি ফ্যান পেজ। দুই ক্লাবের অনুরাগীরা যেন অনেক আগে থেকেই ফেসবুকের দেওয়াল দখল করে নিতেন। এক শিবির অন্য শিবিরকে খোঁচা দিত। কেউ টেনে আনত ইতিহাস। তো কেউ বানাতো দুরন্ত সব ছড়া। এবার দুই শিবিরই একটা ব্যাপারে একমত, খেলার ফল যাই হোক, গ্যালারি যেন ন্যায়বিচারের দাবিতে গর্জে ওঠে। তাই দুই শিবিরই প্রস্তুতি চালাচ্ছে নিজেদের মতো করে।
বড় ম্যাচ মানেই বাঙালির মেরুকরণ। সেদিন যেন দু’ভাগ হয়ে যায় বাঙালি। কিন্তু এই লড়াইয়ে এক সুরে গর্জে উঠতে চলেছে যুবভারতী। লাল হলুদ শিবিরের এক সমর্থক জানালেন, কে কোন রাজনীতি করে, সেটা বড় ব্যাপার নয়। আমরা চাই অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক। আমরা চাই, গ্যালারি সেই দাবি নিয়েই গর্জে উঠুক। পিছিয়ে নেই সবুজ মেরুনও। ফ্যান ক্লাবের এক কর্তার কথায়, ‘আমরা বিভিন্ন স্লোগান লিখে নিয়ে যাব। বিশেষ টিফো বানানোর কাজও চলছে। অন্তত এই ব্যাপারে ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে আমাদের কোনও লড়াই নেই। কে কোন রাজনীতি করেন, সেই সব ভুলে গিয়ে যেন সবাই এক সুরে চিৎকার করতে পারি।’
দুই শিবির যখন অভিনব প্রতিবাদের প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখন প্রশাসনও কি হাত গুটিয়ে বসে থাকবে? এই প্রতিবাদ কতদূর পর্যন্ত ছাড় দেওয়া হবে, এখনও ভেবে উঠতে পারছে না পুলিশ। উই ওয়ান্ট জাস্টিস স্লোগানটা যে শেষমেশ রাজনৈতিক স্লোগানের চেহারা নেবে না, কে বলতে পারে! শাসকের পক্ষে তা বিড়ম্বনার কারণ হতেও পারে। কে বলতে পারে, হয়তো মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চাই, এমন দাবিও কেউ তুলে ধরতে পারেন। আবার এমন প্রতিবাদকে আটকে দিতে গেলে ফল বুমেরাং হতে পারে। টিফো বা পোস্টার হয়তো আটকে দেওয়া গেল, কিন্তু চিৎকার বা স্লোগান কে আটকাবে?
এমনিতে ডার্বিতে মহিলাদের ভিড় বিরাট উল্লেখযোগ্য নয়। কিন্তু এবার সেই ছবিটাও বদলে যেতে পারে। শুধু প্রতিবাদ জানাতেই মহিলারা আসতে পারেন কাতারে কাতারে। বিভিন্ন ফ্যান ক্লাব এর মধ্যেই উদ্যোগ নিয়েছে মহিলাদের আরও বেশি করে মাঠে আনার। দরকার হলে নিজের টিকিট কোনও মহিলার হাতে তুলে দিতেও দ্বিধা নেই। রাত দখলের পর এবার কি মাঠ দখলের পথে প্রতিবাদী নারীশক্তি? যদি সত্যিই তেমনটা হয়, শুধু বাংলার ফুটবল নয়, বিশ্ব ফুটবলে অন্য এক বার্তা রেখে যাবে এবারের ডার্বি।