স্বরূপ গোস্বামী
শাঁখ বাজান। উলু দিন। আমাদের জয় শাহ আইসিসি চেয়ারম্যান হচ্ছেন। শাঁখ বাজাতে না জানলে মাঝরাতে ছাদে উঠুন। লকডাউনের সময় যেমন থালা বাজিয়েছিলেন, তেমনই থালা বাজান। এটা তো পারবেন, নাকি তাও পারবেন না?
আপনাদের নিয়ে আর পারা যায় না। আপনারা দেশের গর্বে গর্বিত হতে শেখেননি। সবচেয়ে কমবয়সী একজন আইসিসি–র চেয়ারম্যান হলেন। এর পরেও আপনার গর্ব হচ্ছে না? আমার তো বাপু খুব হচ্ছে।
যাই বলুন, জয় শাহ কিন্তু একসময় দারুণ ক্রিকেট খেলতেন। তাঁর যা প্রতিভা ছিল, চাইলে ইন্ডিয়া খেলতেই পারতেন। কেন যে খেললেন না! আসলে, তিনি হলেন সেই সিধু জ্যাঠার মতো। যিনি অনেককিছুই করতে পারতেন। তাহলে অন্য অনেকের পসার জমত না। তাই কিছুই করেননি।
কী বললেন, জয় শাহ ভাল ক্রিকেট খেলতেন, এমনটা আপনি শোনেননি। সে তো মশাই আপনি অনেককিছুই শোনেননি। আপনি শোনেননি মানেই সেটা মিথ্যে, এমন তো নয়।
বেশ, তিনি যে ক্রিকেটটা দারুণ বোঝেন, এটা তো মানবেন! ভারত তো বটেই, বিশ্ব ক্রিকেটের ইতিহাস একেবারে গুলে খেয়েছেন। ব্র্যাডম্যানের আমল থেকে সব কিছু গড়গড় করে বলে যেতে পারেন।
কী বললেন? তাঁকে ক্রিকেট নিয়ে তেমন বলতে শোনেননি! আরে বাবা, সংযম, সংযম। জানলেই কি সব বলতে হয় নাকি! তিনি তাঁর বিস্তর জ্ঞানকে লুকিয়ে রাখেন। জাহির করেন না।
ক্রিকেটের পরিকাঠামো তাঁর থেকে ভাল কজন বোঝেন? কোথায় কেমন পিচ হওয়া উচিত, ঘরোয়া ক্রিকেটের কাঠামো কেমন হওয়া উচিত, মাঠে জল জমলে নিকাশি কেমন হওয়া উচিত, গ্যালারির সংস্কার কীভাবে হতে পারে, এসব ব্যাপারে এই পোড়া দেশে তাঁর থেকে ভাল কে জানেন?
তিনি কী সুন্দর প্রেস কনফারেন্স করেন। কী সুন্দর ঝরঝরে ইংরাজি। ঠিক যেন সাহেবরা কথা বলছে। আহা, শুনে মন জুড়িয়ে যায়।
আপনি হয়তো তাঁর এমন ঝরঝরে ইংরাজি শোনেননি। শোনার কথাও নয়। আসলে, দোষটা আপনার নয়। কেউই শোনেনি। কিন্তু তিনি দারুণ ইংরাজি বলেন, এটা ভাবতে আপনার কীসের এত অপত্তি?
ভারতীয় ক্রিকেটের রোড ম্যাপ কী হতে চলেছে, কত সুন্দর ব্যাখ্যা করেন। দল নির্বাচন নিয়েও কত সুন্দর ব্যাখ্যা দেন।
কী বললেন, এমন কোনও ব্যাখ্যা আপনি শোনেননি? আপনি মশাই ক্রিকেটের কী বোঝেন? অনেককিছুই ঘটে, যা আপনি জানেন না।
প্রাক্তনদের সম্মান দেওয়ার ক্ষেত্রে জয় শাহ কিন্তু আদর্শ। বিশ্বকাপের ফাইনালে কপিলদেব, এম এস ধোনিদের সম্মান দিয়ে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। তিনি জানেন, এই দুজন বিশ্বজয়ী অধিনায়ক। এই দুজনকে আগে সম্মান দিতে হয়।
আপনি নিশ্চয় ভাবছেন, বিশ্বকাপ ফাইনালে তো কপিলদেব ছিলেন না। বরং, আমন্ত্রণ পাননি বলে প্রকাশ্যেই জানিয়েছিলেন। ধোনিকেও তো ফাইনালে মোতেরার আশেপাশে দেখা যায়নি। কপিল, ধোনিরা ডাক পাননি তো পাননি। তাতে কী যায় আসে? ওঁরা কে যে ওঁদের ডাকতে হবে? তাছাড়া, বিশ্বকাপ প্রায় দশ মাস পেরিয়ে গেল। এত পুরনো কথা মনে রাখতে কে বলেছে?
মনে রাখবেন, ভারতে আইপিএল চালু হয়েছে জয় শাহর জন্য। ভারত এবার টি২০ বিশ্বকাপ জিতেছে জয় শাহর জন্য। বিরাট কোহলি একদিনের ক্রিকেটে পঞ্চাশখানা সেঞ্চুরি করেছেন জয় শাহর জন্য। এমনকী, শচীনের একশো খানা শতরান, সেটাও জয় শাহ ছিলেন বলেই। জানি, আপনি বিশ্বাস করছেন না। আপনি বিশ্বাস না করলে বয়েই গেল। সবাই বলছে, আপনিও বলবেন, ব্যাস। এত কথা কীসের?
মনে রাখবেন, জয় শাহ সম্পূর্ণ নিজের কৃতিত্বে এতদূর উঠে এসেছেন। কোনও বাবা–জ্যাঠার হাত ধরে উঠে আসেননি। তিনি স্বনামধন্য।
আপনি নিশ্চয় মনে মনে বিড়বিড় করে বলছেন, জয় শাহর বাবার নাম অমিত শাহ।
শুনুন তাহলে। কান খুলে ভাল করে শুনুন। জয় শাহর বাবার নাম যদি অমিত শাহ হয়, তাতে আপনার বাবা কী?