কাউকে নয়, তিনি শুধু নিজেকেই বাঁচাতে চান

সরকার ঠিক কাকে বাঁচাতে চাইছে?‌ গত কয়েকদিন ধরে এমন একটা প্রশ্ন ঘোরাফেরা করছে। যে ধর্ষণ ও খুন করেছে, সত্যিই কে সে প্রভাবশালী কেউ?‌ মানে, তার কোনও আত্মীয় কি প্রভাবশালী?‌

হতেও পারে। আবার নাও পারে। সত্যিই যদি প্রভাবশালী কারও আত্মীয় হয়েও থাকে, তাকে বাঁচাতে সরকার কি এতখানি নির্লজ্জ হয়ে উঠবে?‌ দলের লোকেদের সত্যিই কি মুখ্যমন্ত্রী এতখানি ভালবাসেন?‌ মনে তো হয় না।

নিজের দলের বিরুদ্ধে তিনি ছিটেফোঁটা ব্যবস্থা নিলেও তাঁর গুণগ্রাহীরা ধন্য ধন্য রবে নেমে পড়েন। সবার মুখেই সেই এক বুলি, মুখ্যমন্ত্রী দেখিয়ে দিলেন, রাজধর্ম কাকে বলে। মুখ্যমন্ত্রী নিজেও নিজের ঢাক পেটাতে শুরু করে দেন। মনে রাখবেন, আমি কাউকে রেয়াত করি না। অন্যায় করলে আমার দলের লোকেদের বিরুদ্ধেও আমি ব্যবস্থা নিই।

এখানে তো ব্যবস্থা নেওয়ার দারুণ একটা সুযোগ ছিল। নিজের ভাবমূর্তিকে আরও উজ্জ্বল করার পড়ে পাওয়া চোদ্দআনা একটা সুযোগ ছিল। গোটা দেশে তাঁকে নিয়ে ধন্য ধন্য রব পড়ে যেত। আর নিজের ভাবমূর্তির জন্য তিনি যে সব পারেন, এটা বহুবার প্রমাণিত। তাহলে, এমন সুযোগটা ছেড়ে দিলেন কেন?‌

আসলে, অন্য কাউকে নয়, নিজেকেই বাঁচাতে চাইলেন। ধরে নিলেন, হাসপাতালে ধর্ষণ ও খুন, এটা সামনে এসে গেলে তাঁর দুর্নাম হয়ে যাবে। তার ওপর অপরাধী যদি দলের লোক, এমনটা বেরিয়ে যায়, তাহলে কলঙ্ক আরও বাড়বে। তাই কোনওকিছুই সামনে আসতে দেওয়া চলবে না। না, তাঁকে এমন নির্দেশ দিতে হয়নি। পারিষদরা বিলক্ষণ জানেন, নেত্রী কীসে সন্তুষ্ট হন। তাঁদের ধরে আনতে বলার আগেই তাঁরা বেঁধে আনতে তৎপর হয়ে পড়েন। সেই তালিকায় কিছু ডাক্তার যেমন আছেন, কিছু পুলিশ বা আমলা যেমন আছেন, তেমনই আছেন কিছু পেটোয়া সাংবাদিকও। তাঁরা আগাম ‘‌কিছুই হয়নি’‌ রব তুলতে শুরু করেন। এক্ষেত্রেও তেমনটাই হয়েছিল। কিন্তু জল এতদূর গড়িয়ে যাবে, কেউই বুঝতে পারেননি।

আর দশটা বিষয় ধামাচাপা দিতে পুলিশ যা করে থাকে, এক্ষেত্রেও তার অন্যথা হয়নি। আসলে, এটাই চেনা ফর্মুলা। এটাই পদোন্নতির সেরা টোটকা। ধামাচাপা দিতে এত লোক আসরে নেমে পড়েছেন, এবার সেগুলোও প্রকাশ্যে চলে আসবে। এমনকী আগের সব ঘটনাতেও তাঁরা কী কী অপকর্ম করেছিলেন, সেগুলোও বেরিয়ে পড়তে পারে। জালটা এতদূর ছড়িয়ে গেল, কাকে বাঁচাতে কাকে বলি দেবেন, সেটা বেছে নেওয়াই মুশকিল।

কখনও সেমিনার হল ভাঙার চেষ্টা। সেই উদ্যোগ ভেস্তে যেতে বাইরের গুন্ডাদের তাণ্ডব। কী লোপাট করতে চাইছে, কে জানে!‌ থার্ড ফ্লোর ভাঙতে গিয়ে তিন তলার ঘরে ভাঙচুর চালালো। ভাঙচুর করতে গেলেও পেটে একটু বিদ্যে লাগে, এই অর্বাচীনদের কে বোঝায়!‌ মুখ্যমন্ত্রীও তেমনি। কখনও বলছেন, সিবিআই তিনদিনের মধ্যে ফাঁসির ব্যবস্থা করুক। কখনও বলছেন, রাম–‌বামেরা প্রমাণ লোপাট করতে ভাঙচুর করছে। আচ্ছা, প্রমাণ লোপাট করে বাম–‌রামের কী লাভ?‌ পুলিশ কমিশনার বলছেন, কারা ভাঙচুর চালিয়েছে, তদন্ত হচ্ছে। আবার কখনও তিনি বলছেন, গুজব ছড়ালে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভাঙচুরের তদত হল না, অথচ, মুখ্যমন্ত্রী নিদান দিয়ে বসলেন, বাম–‌রাম ভাঙচুর করেছে। তাহলে গুজবটা কে ছড়াল?‌ স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী বলে দিয়েছেন, রাম–‌বাম ভাঙচুর করেছে। এবার পুলিশ কমিশনারের ঘাড়ে কটা মাথা তিনি উল্টোটা বলবেন?‌ লেজ নাড়া সারমেয় যা করে, তিনিও এবার তাই করবেন। একজনের মিথ্যের বেসাতি ঢাকতে এবার কতজনকে কত মিথ্যে বলতে হবে, কে জানে!‌

ধরেই নিলাম, পুলিশ এমন গোপন রিপোর্ট মুখ্যমন্ত্রীকে দিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী সেই গোপন রিপোর্ট বেমালুম জনসভায় বলে দিলেন। পদ ও গোপনীয়তার কী শপথ নিয়েছিলেন, মনে আছে?‌ শুধু এই অপরাধেই তাঁর কারাবাস হতে পারে। আসলে, আইন সম্পর্কে সামান্য ধারণা না থাকা লোক যদি প্রশাসনিক প্রধান হয়ে যান, এমনটাই হয়।

ভাঙচুর করা লোকগুলোকে এখান ওখান থেকে ধরে আনা হয়েছিল। তাদের পেটে তেমন বিদ্যেবুদ্ধি ছিল না। তাই এক জায়গায় ভাঙতে গিয়ে অন্য জায়গায় ভেঙে ফেলছে। আর একজন। তিনিও জানেন না, কোথায় কোনটা বলতে হয়, আর কোথায় কোনটা বলতে নেই। দুই শ্রেণির মধ্যে কি খুব তফাত আছে?‌

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.