বেঙ্গল টাইমস প্রতিবেদন
আদালত একবার সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিলেই হল। চ্যানেলগুলি এমন উচ্চস্বরে চিৎকার জুড়ে দেন, যেন বিরাট এক যুদ্ধজয়। যেন, সিবিআই এসেই একদিনের মধ্যে সব রহস্যের কিনারা করে দেবে। যেন ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সব মাথারা ধরা পড়ে যাবে।
একদিন পর শুরু হয় অন্যরকম উন্মদনা। ঘটনাস্থলে এলেন সিবিআই আধিকারিকরা। বিরাট এক তৎপরতা। এই বুঝি তদন্তের দায়ভার বুঝে নিলেন। এই বুঝি কাজ শুরু করে দিলেন। একের পর এক জেরা। তারপরই পটাপট গ্রেপ্তার। একের পর এক প্রমাণ খুঁজে বের করে যেন পরের দিনই আদালতের হাতে তুলে দেওয়া হবে। পারলে পাঁচদিনেই ফয়সালা হয়ে যাবে। দিন কয়েক এভাবেই কেটে যায়। সিবিআই এর গোপন সূত্র এই জানিয়েছে, ওই জানিয়েছে— এই মর্মে কয়েকদিন হাওয়া গরম।
তারপর দেখা যায়, পর্বতের মূষিক প্রসব। অশ্বডিম্ব প্রসবও বলা যায়। কাজের কাজ আর কিছুই এগোয় না। আদালতে তারিখ পে তারিখ চলতে থাকে। একসময় অভিযুক্ত বলে ওঠেন, আমি নির্দোষ, আমার বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণ নেই। সিবিআই এর আইনজীবী মিনমিন করে বলতে থাকেন, হুজুর, উনি প্রভাবশালী। আরও জিজ্ঞাসাবাদ দরকার। এদিকে, বিচারপতি মাঝে মাঝে বলেন, তদন্তে আরও গতি আসুক।
মোটামুটি এই চর্বিত চর্বন। তাই আরজি কর কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ হওয়ার পরেও উল্লসিত হওয়ার কোনও কারণ দেখছি না। দু তিন দিন হইচই হবে। দু একজন চুনোপুটি গ্রেপ্তার হবে। দু একজনকে জেরা করা হবে। তারপর সিবিআই যথারীতি শীতঘুমেই চলে যাবে।
অনেকে বলছেন, পুলিশ নাকি প্রমাণ লোপাট করে দিয়েছে। ধরেই নিলাম। কিন্তু পুলিশ এত সাহস পায় কোথা থেকে, সেটা একবার ভেবে দেখা দরকার। আসলে, পুলিশ জানে, যত খুশি প্রমাণ লোপাট করলেও সিবিআই কিচ্ছু করতে পারবে না। রাজীব কুমার, অর্ণব ঘোষের মতো অফিসাররা দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন। উল্টে তাঁদের প্রোমোশন হচ্ছে। শিক্ষা দুর্নীতিতেও যাঁরা এত এত প্রমাণ লোপাট করলেন, তারপরেও তাঁদের কী হল! যে কয়েকজনকে ধরা হয়েছে, তাঁরাও গলা বাজিয়ে আদালতে বলতে পারছেন, হুজুর, আমার বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণ নেই।
প্রশ্ন হল, সত্যিই কি সিবিআই কর্তারা এতখানি অপদার্থ? তা তো নয়। তাঁদের দক্ষতা নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই। কোনও এক অদৃশ্য কারণে তাঁদের শীতঘুমে চলে যেতে হয়। কারও হাতে সেই লাগাম আছে, যিনি ইচ্ছেমতো সেই লাগাম টেনে ধরেন। মাঝপথে তদন্ত থামিয়ে দেন। এই ধর্ষক, এই খুনিদের ধিক্কার জানান। পাশাপাশি, যাঁরা সিবিআইকে এমন একটি অপদার্থ এজেন্সিতে পরিণত করলেন, সেই প্রভাবশালীদেরও ধিক্কার দিতে শিখুন। দিল্লিতে এইসব লোকেরা বসে আছেন বলেই এই রাজ্যে অপরাধীরা হুঙ্কার দিতে পারে।
এখন আর সিবিআই তদন্ত হচ্ছে শুনলে কেউ ভয় পায় না। বরং নিশ্চিন্তে থাকে। জানে, কিছুই হবে না। সিবিআই এর দৌড় কতদূর, পুলিশ যেমন জানে, অপরাধীরাও জানে। আমরা সত্যিই নির্বোধ। তাই এখনও সিবিআই তদন্ত হচ্ছে শুনে উল্লসিত হয়ে পড়ি।