ফুটবলার তৈরিতে গোল্লা মোহনবাগান

কুণাল দাশগুপ্ত

গত মরশুমের আইএসএলের ফিরতি ডার্বি। ইস্টবেঙ্গলের সমর্থকদের হৃদযন্ত্রের গতি যেন উসাইন বোল্টকে চোখ রাঙাচ্ছে। ৭৫ বুঝি সদর দরজায় কড়া নাড়াচ্ছে। প্রথমার্ধটা কামিন্স অ্যান্ড কোং লাল–‌ হলুদ টিমটাকে নিয়ে রান্নাবাটি খেলছে। গোটা টিম তো তখন শেষের সে দিন ভেবে প্রলয় শেষের প্রহর গুনছে। দ্বিতীয়ার্ধের কয়েকটা পরিবর্তন ইস্টবেঙ্গলের বস্ত্রহরণ থেকে রক্ষা করেছিল।

শনির বিকেলে এমনই শাসানি দিয়ে গেল ইস্টবেঙ্গল। ৭৫ এর সেই পাঁচ গোলের পুনরাবৃত্তি!‌ স্কোরলাইন দেখে আদৌ সেটা মনে হবে না। যাঁরা সাতসকালের কাগজ খুলে শুধু স্কোরলাইন দেখে সবজান্তার মতো ম্যাচ বোঝার চেষ্টা করেন, তাঁরা ২–‌১ দেখে হয়তো বলবেন, বেশ হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে। আসলে, পাঁচ গোলের ওই হাতছানিটা যেন মোহনবাগান দরজায় কলিং বেল বাজিয়ে শূন্য মনে ফিরে গেল।


ডার্বির শত বছরে ইস্টবেঙ্গল–‌মোহনবাগানের হাতে বর্ণপরিচয় ধরিয়ে দিল। লাল হলুদ ব্রিগেড ২–‌১ গোলে ম্যাচ জিতলো। ওটা ৫–‌১ ও হতে পারত। ভাগ্যিস, ফুটবলে কোনও নেভিল কার্ডাস নেই। থাকলে স্কোরবোর্ড সম্পর্কে যা বলেছেন, স্কোরলাইন সম্পর্কেও তেমনই কিছু নিদান দিতেন। বিষ্ণুদের আরেকটু অভিজ্ঞতা থাকলে, আমন সি কে (ব্রহ্মা) আর সায়ন (মহেশ্বর) আর একটু সক্রিয় হলে, সবুজ–‌মেরুন ফ্যাট ফ্যাটে সাদা হয়ে যেতে পারত।

সমস্যা মোহনবাগানের থিঙ্ক ট্যাঙ্ক নিয়ে। হোম ওয়ার্ক না করেই মাঠে নামিয়েছিল দলকে। ৯০ মিনিট একদল ছেলেপুলে নেচেকুদে বেড়াল। ফাঁকিবাজ ছাত্ররা আইএএস পরীক্ষায় বসলে যা হয়। কর্তারা বা সঞ্জীববাবু বোঝেননি, টাকা বিলিয়ে ভাল প্লেয়ার কেনা যায়। কিন্তু আনকোরা প্লেয়ার তৈরি করতে গেলে প্লেয়ার চেনার চোখ লাগে, ধৈর্য্য লাগে, সময় লাগে। টাকা দিয়ে মহম্মদ রফির গান কেনা যায়, মহম্মদ রফি বানানো যায় না। ওটার জন্য পরিকল্পনা, অধ্যাবসায় এবং সঠিক শিক্ষা প্রয়োজন।

অথচ, আইএসএলে এই মোহনবাগান দারুণ খেলে। ট্রফিও পায়। তাহলে, গত কয়েকবছর ধরে নানা বাহানায় ঘরোয়া লিগ এড়িয়ে যায় কেন?‌ এবার কিছুটা বোঝা গেল। আসলে, এই ম্যাচ দেখিয়ে দিল, ফুটবলার তোলার ক্ষেত্রে ইস্টবেঙ্গলের থেকে মোহনবাগান ঠিক কতটা পিছিয়ে আছে।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.