সরল বিশ্বাস
গণতান্ত্রিক দল মানে কী? যেখানে মুক্তচিন্তার পরিসর থাকে। যেখানে নির্দিষ্ট ফোরামে অবাধে নিজের মত প্রকাশ করা যায়। অনেক দলেই সেই পরিবেশ, সেই পরিমণ্ডল নেই।
সিপিএমে কি আছে? কতটা আছে, তা নিয়ে বিতর্ক থাকতেই পারে। কিন্তু অন্য দলগুলোর তুলনায় অনেকটা বেশি আছে, এটা নিয়ে কোনও সংশয় নেই। এবার আরও একধাপ সেই মুক্ত চিন্তার দিকে পা বাড়ালেন বাংলার সিপিএম নেতৃত্ব।
আগের লোকসভাতেও এই রাজ্য থেকে বামেদের আসন শূন্য ছিল। এই লোকসভাতেও তাই। মাঝের বিধানসভা নির্বাচনেও খাতা খোলেনি। ঘরে–বাইরে সমালোচনা উঠে আসবে, সেটাই স্বাভাবিক। কটূক্তি, উপহাস হজম করতে হবে, সেটাও স্বাভাবিক। এই পরিস্থিতিতে কীভাবে ঘুরে দাঁড়ানো যায়, সেই রাস্তা খোঁজাটাও জরুরি। তাই এবার জনতা কী মনে করছে, তা জানার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দেওয়া হয়েছে একটি ই মেল আইডি। writetocpim@gmail.com এই ঠিকানায় চিঠি লিখে যে কেউ নিজের মতামত জানাতে পারেন।
পার্টিকর্মীরা পার্টির নানা ফোরামে মতামত জানাতে পারেন। লিখিতভাবেও জানাতে পারেন। কিন্তু এমন অনেকেই আছেন, যাঁরা হয়তো প্রত্যক্ষ রাজনীতি করেন না। মিটিং, মিছিলে থাকেন না। কিন্তু ভোট দেন। তাঁদেরও অনেক কথা বলার থাকতে পারে। আবার এমন অনেকে আছেন, যাঁরা একসময় ভোট দিতেন, কিন্তু নানা কারণে মুখ ফিরিয়েছেন। তাঁদের ক্ষোভ বা অভিমানের কারণ জানাটাও জরুরি। তেমন একটা ফ্ল্যাটফর্ম খুলে দেওয়া হল।
এটা ঘটনা, বামেদের কাজকর্মে জনমতের অনেকটাই প্রতিফলন দেখা গেছে। প্রচারের আঙ্গিক থেকে স্লোগান, আধুনিক মননের ছোঁয়া দেখা গেছে। প্রচলিত ছক ভেঙে ব্যতিক্রমী পথেও হাঁটতে দেখা গেছে। কখনও তা ফলপ্রসূ হয়েছে। কখনও হয়তো নতুন বিতর্ককে উস্কেও দিয়েছে। কোথাও জনতা সমর্থন জানিয়েছে, আবার কোথাও বিদ্রুপের শিকারও হতে হয়েছে। এর পরেও অনেকের অভিযোগ ছিল, দলীয় নেতৃত্ব মুখ ফিরিয়ে থাকেন। মানুষের মতামত শুনতে চান না। বা শুনতে চাইলেও বলার পরিসর থাকে না। এবার অন্তত ঘরে বসেই জানানোর সুযোগ হয়েছে। নিজের পরামর্শ যেমন দেওয়া যাবে, তেমনই সমালোচনা থাকলে তাও জানানো যাবে।
প্রশ্ন হল, জনতা তো না হয় জানালেন। কিন্তু নেতৃত্ব আদৌ সেগুলো পড়ে দেখবেন তো? সেগুলোর ওপর নতুন করে ভাবনা চিন্তা হবে তো? নাকি, নিছক দলীয় কোনও কর্মী দেখলেন। বিষয়গুলিকে তিনি হয়তো লঘু করে দেখলেন। তিনি হয়তো নির্যাসটাই বুঝলেন না। বা দলীয় নেতৃত্বকে জানানোর প্রয়োজনই মনে করলেন না। বা সবজান্তা সেজে ভেবে নিলেন, ‘এ আর নতুন কথা কী? এ তো সবাই জানে। এত জ্ঞান দেওয়ার কী আছে?’ তারপর দেখা গেল, লেখাই সার হল। কিন্তু আসল জায়গায় আসল বার্তা পৌঁছলোই না। ফলে, যেমন চলছিল, তেমনই চলতে লাগল। সংস্কার কিছুই হল না।
কর্মী, সমর্থক বা আমজনতার যেমন উচিত, নিজেদের মতামত তুলে ধরা। তেমনই দলীয় নেতৃত্বেরও দায় সেগুলো খুঁটিয়ে পড়া, অনুধাবন করা, তারপর উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া। দেখা যাক, আদান–প্রদানের এই পরিসর কতটা প্রসারিত হয়।