‘‌৩৪ বছর’ এর সূচনা হয়েছিল এই দিনেই

শুভঙ্কর গুপ্ত
দিনটা অনেকেই ভুলে গেছেন। সেটাই স্বাভাবিক। এই দিনটা তো ধুমধাম করে পালন হয় না। জেলায় জেলায়, ব্লকে ব্লকে উৎসবও হয় না। কিন্তু এমনই একটা দিনে (‌২১ জুন)‌ প্রথমবার শপথ নিয়েছিল বামফ্রন্ট সরকার। কথায় কথায় যে ৩৪ বছর, ৩৪ বছর আওড়ানো হয়, তার যাত্রা পথটা শুরু হয়েছিল ৭৭ সালের এই দিনটাতেই।

বিরাট কোনও আড়ম্বর ছিল না। অনাড়ম্বরভাবেই হয়েছিল শপথগ্রহণ। রাইটার্স বিল্ডিংয়ের সামনে সংবর্ধনা। প্রথমদিনই জ্যোতি বসু ঘোষণা করেছিলেন, আমরা রাইটার্স থেকে সরকার চালাব না। গ্রামে ক্ষমতা পৌঁছে দেব। গ্রামের মানুষ যেন নিজেরা উন্নয়নের পরিকল্পনা রচনা করতে পারেন, সেই পথে সরকার এগোবে।
কথা রেখেছিলেন। পরের বছরই হয়েছিল ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের নির্বাচন। গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি, জেলা পরিষদ। তিনটি স্তরের মাধ্যমেই তৈরি হত উন্নয়নের কাঠামো। পঞ্চায়েতই হয়ে উঠল ক্ষমতার কেন্দ্র।
যে মানুষটা চাষ করতেন, অন্যের খেতে মজুর ছিলেন, তিনিই হয়ে গেলেন পঞ্চায়েত প্রধান। জোতদারদের সার্টিফিকেট নিতে তাঁর কাছেই যেতে হয়। না, এর জন্য সরকারকে জেলায় গিয়ে লোকদেখানো প্রশাসনিক বৈঠক করতে হয়নি। কারণ, গ্রামের ওই রাস্তাটা মুখ্যমন্ত্রীর কথায় হবে না। হবে ওই গ্রামের মানুষের চাহিদা অনুযায়ী, সেটার জন্য গ্রাম পঞ্চায়েত মেম্বারই যথেষ্ট ছিলেন। ডিএম–‌কে বা মুখ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ করতে হয়নি।

তখন যেটা পঞ্চায়েত মেম্বার বা প্রধানই করতে পারতেন, এখন সেটা ঢাক পিটিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে করতে হয়। এটাই তফাত। কিন্তু এই মৌলিক তফাতটা কজন আর বোঝেন!‌ কার বোঝার দায় পড়েছে!‌ ১৪ লক্ষ একর জমি বন্টন করা হল ভূমিহীন কৃষকদের মধ্যে। মন্ত্রীসভার ২ নম্বর ব্যক্তি ছিলেন বিনয় চৌধুরি। তাঁর দপ্তর ছিল ভূমি সংস্কার। গুরুত্বের বিচারে যিনি মুখ্যমন্ত্রীর ঠিক পরেই, তাঁর দপ্তর ভূমি সংস্কার। এখন ভূমি সংস্কার মন্ত্রী কে?‌ জিজ্ঞেস করুন, একশো জনের মধ্যে নিরানব্বই জন জানে না। এমনকী যিনি এই দপ্তরের দায়িত্বে, তিনি নিজেও ঠিকমতো জানেন বলে মনে হয় না। তাঁকে জিজ্ঞেস করুন আপনার হাতে কোন কোন দপ্তর?‌ উনি গড়গন করে গোটা দশেক নাম বলে যাবেন। নিশ্চিত থাকুন, সেই তালিকায় ভূমিসংস্কার থাকবে না। গত চোদ্দ বছরে বিধানসভায় ভূমিসংস্কার বাজেট নিয়েও আলোচনা হয় না। প্রতিবার তা চলে যায় গিলোটিনে।

আরও কত কথাই বলা যাক। থাক সে সব কথা। তাহলে দিনটার তাৎপর্য হারিয়ে যাবে। যাঁদের কাছে দিনটা এখনও রোমাঞ্চের মনে হয়, এই লেখা শুধু তাঁদের জন্যই। সবাই এর মর্ম বুঝবেন, এমন আশা অন্তত এই লেখকের নেই।

 

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.