নতুন দিক খুলে দিল ইস্টবেঙ্গল

দেবায়ন কুণ্ডু

যাঁরা টাকা ঢালেন, বিনিয়োগ করেন, আমরা তাঁদের হয়ত কিছুটা নিচু নজরেই দেখি। তাই, আমাদের কাছে চলচ্চিত্রের প্রযোজক মানে কিছুটা ভিলেন গোছের। শিল্পোদ্যোগী মানেও কিছুটা সেইরকম। ক্লাবের স্পনসরদের ক্ষেত্রেও আমাদের মানসিকতাটা প্রায় একইরকম।

একটি সংস্থা ক্লাবকে টাকা দেবে, কিন্তু তাদের কোনও অধিকার থাকবে না। সদস্য–‌সমর্থকরা মোটামুটি এমনটা ধরেই নিই। কোনও স্পনসর এলেও তাকে যতক্ষণ না তাড়াতে পারছি, আমাদের যেন শান্তি নেই। এই কারণেই ময়দানের অনেক ছোটখাটো ক্লাবে স্পনসর এলেও আমরা তাঁদের ধরে রাখতে পারি না।
ইস্টবেঙ্গল কর্তাদের ধন্যবাদ। তাঁরা একটি দারুণ সিদ্ধান্ত নিলেন। রতন টাটাকে ‘‌ভারত গৌরব’ স্বীকৃতি দিলেন।

ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে টাটা গোষ্ঠীর তেমন কোনও আর্থিক লেনদেনের সম্পর্ক আছে বলে শুনিনি। তারপরেও তাঁরা রতন টাটার মতো মানুষকে যে স্বীকৃতি দিলেন, তা সত্যিই দৃষ্টান্তমূলক। রতন টাটা কি শুধুই একজন শিল্পোদ্যোগী?‌ খেলাধূলার পেছনে‌ তাঁর অনুরাগ ও অবদান কার থেকে কম?‌ সেই কতকাল আগে চালু করেছিলেন টাটা ফুটবল অ্যাকাডেমি। যা বহু বছর ধরে ভারতীয় ফুটবলের সাপ্লাই লাইন। কৃতী খেলোয়াড়দের চাকরি দেওয়া তো আছেই। তাছাড়াও, বিভিন্ন খেলার বিস্তারে তাঁদের ভূমিকা মনে রাখার মতোই। যেসব খেলা বাণিজ্যিক আনুকূল্য পায় না, যে সব খেলা প্রচারের আলো থেকে হাজার মাইল দূরে, সেইসব খেলাকেও প্রোমোট করেছেন এই মানুষটি। সেইসব খেলার পরিকাঠামো তৈরি করা, খেলোয়াড় তৈরি করা, তাদের পাশে থাকার কাজটা দশকের পর দশক ধরে নিঃশব্দে করে এসেছেন।

রতন টাটা সারাজীবনে দেশ–‌বিদেশ থেকে অনেক পুরস্কার পেয়েছেন। কিন্তু খেলাধূলার প্রসারের জন্য স্বীকৃতি হয়ত তাঁকেও কোথাও একটা তৃপ্তি এনে দেবে। ইস্টবেঙ্গল যে এমন সম্মান জানাতে পারল, এর জন্য ক্লাব কর্তাদের ধন্যবাদ। বলা যায়, নতুন একটা দিগন্ত খুলে গেল। এই বাংলাতেও এমন অনেকেই আছেন, যাঁরা বছরের পর বছর নীরবে খেলাধূলায় সাহায্য করে আসছেন। এবার তাঁদেরও সম্মান জানানো হোক।

 

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.