এই হামি যেন অনেকটাই দায়সারা

শ্যামশ্রী দাশগুপ্ত

যে কোনও ছবির সিকুয়েল তৈরি হলে তাকে ঘিরে একটা বাড়তি আগ্রহ তৈরি হয়। নানা রকম জল্পনা তৈরি হয়। এই ছবিটা আগেরটার মতো হবে তো?‌ নাকি তাকেও ছাপিয়ে যাবে?‌ দুটো ছবির মধ্যে তুলনা অবধারিত।

হামির পর এবার পর্দায় হাজির হামি টু। প্রাক করোনা আর করোনা উত্তর দুই সময়। একটা ছবি মারাত্মক সফল। স্বাভাবিকভাবেই পরের ছবিটা নিয়ে আগ্রহ ছিল আরও বেশি। কিন্তু দুই পরিচালকের ওপর পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেও বলতে হচ্ছে, এই হামিটা ঠিক জমেনি। আগেরটার সঙ্গে তুলনা টানতে হলে আগেরটাকে অনেক এগিয়ে রাখতে হবে।

নন্দিতা রায় আর শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। এই জুটি বাংলায় একের পর এক হিট ছবি দিয়ে গেছেন। মানুষকে আবার হলমুখি করেছেন। তাঁদের ছবি হয়ত পুরস্কার পায় না। কিন্তু হলের বাইরে হাউসফুল বোর্ডটা কোনও পুরস্কারের থেকে কোনও অংশে কম নয়। এঁদের ছবিতে থাকে নিটোল একটা গল্প। কিছুটা হাসি, কিছুটা বিনোদন, দিনের শেষে একটা অদ্ভুত ভালো লাগার আবেশ।

আর সেই আবেশ থেকেই হয়ত সিকুয়ালের ভাবনা। বেলাশেষের পর হয়েছিল বেলাশুরু। সত্যি বলছি, এই ছবিকে ঘিরেও প্রত্যাশা ছিল অনেক। কিন্তু ছবিটা সেই প্রত্যাশার ধারেকাছেও ছিল না। এবারও তাই। হামি টু–‌কে অহেতুক একটা জটিল ছবি বানিয়ে তোলা হল।

প্রথম হামিতে ছিল স্কুলের দুষ্টুমি, খুনসুটি, তার মধ্যেই সুন্দরভাবে ওদের বেড়ে ওঠা। আর ওদের ঘিরেই অভিভাবকদের একটা বৃত্ত। ওদের ভাবনা এক খাতে বয়, অভিভাবকরা ছুটছেন অন্য খাতে। সবমিলিয়ে দারুণ হিউমার ছিল বাড়তি প্রাপ্তি। কিন্তু এবার সেই হিউমারটাই যেন পেলাম না। যেটুকু পাওয়া গেল, তা অনেকটা ভাঁড়ামির মতো। রিয়েলিটি শো–‌এর অন্দরমহলকে তুলে ধরতে গিয়ে আগাগোড়া একটা দমবন্ধ করা সিরিয়াস আবহ আনা হল। একে অন্যের বিরুদ্ধে লড়িয়ে দেওয়া হল। নির্মম দিকটা দেখাতে গিয়ে হাসির সেই প্রবাহটাই থেমে গেল। কেন্দ্রীয় চরিত্রে বাচারা আছে ঠিকই, কিন্তু এখানে তারা যেন চালিকাশক্তি নয়। তাদেরও ছুটিয়ে দেওয়া হচ্ছে প্রতিযোগিতার ইঁদুর দৌড়ে। তাই শুরু থেকেই কেমন যেন থমথমে আবহ।

অথচ, এত থমথমে আবহ আনার খুব একটা দরকার ছিল না। ওরা ওদের মতো খেলত, ছুটত, পড়ত, ধুলো ঝেড়ে উঠে দাঁড়াত। তাতে দুষ্টুমি থাকত, খুনসুটি থাকত, দু–‌একটা পাকা পাকা কথাও না হয় থাকত। কিন্তু ওদের এত সিরিয়ার বার্তাবাহক করার কী দরকার পড়েছিল, কে জানে!‌ আগের ছবির মূল থিমটাই ছিল, ওদের পৃথিবীটা অন্যরকম। ওরা ওদের মতো করে বেড়ে উঠুক। কিন্তু এই ছবির থিমটা যেন অন্যরকম হয়ে দাঁড়াল। প্রতিযোগিতার নির্মম দিকটা বড় বেশি করে প্রকট হয়ে উঠল। ফলে, চিত্রনাট্যে সেই ঝরঝরে ভাবটাই উধাও।

বাণিজ্যিক দিক থেকে এই ছবিটাও হয়ত সফলই মনে হবে। কিন্তু এই সাফল্য কিন্তু প্রথম হামির সুবাদে। সেটা এমন একটা উচ্চতায় পৌঁছেছিল বলেই মানুষ এই ছবিটাও দেখতে গিয়েছিল। তাই এই ছবির সাফল্যকে শুধু এই ছবির সাফল্য ভাবলে কোথাও একটা ভুল থেকে যাবে। এই বাণিজ্যিক সাফল্যের ভেতর রয়ে গেছে আগের হামি আর শিবু–‌নন্দিতার ব্র‌্যান্ড। এই ছবি আসলে কতটা ছাপ ফেলল, তা বোঝা যাবে পরের ছবিতে। যাঁরা হতাশ হলেন, তাঁরা অন্তত শিবু–‌নন্দিতার ছবি শুনলেই হলে ছুটবেন না। কিছুটা দ্বিধা, দ্বন্দ্ব তাড়া করবে। তখন বোঝা যাবে, এই ছবিটা আসলে কতটা দাগ কেটেছে। ‌‌

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.