হেমন্ত রায়
আবার সেই দল ভাঙানোর খেলা শুরু হয়েছে। বিজেপির টিকিটে জেতা বিধায়করা একে একে যোগ দিচ্ছেন তৃণমূলে। ঘটা করে তাঁদের হাতে পতাকা তুলে দেওয়া হচ্ছে। কোনওদিন পতাকা তুলে দিচ্ছেন পার্থ চ্যাটার্জি, কোনওদিন ব্রাত্য বসু, কোনওদিন ভাইপো অভিষেক ব্যানার্জি। আবার কোনও কোনও দলবদলের আসরে হাজির থাকছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী।
এত বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে আসার পরেও কেন দল ভাঙাতে হচ্ছে, সেই উত্তর পরিষ্কার নয়। কেউই তৃণমূলে যোগ দেওয়ার আগে বিধায়ক পদ থেকে পদত্যাগ করছেন না। প্রথম দুটো টার্মে যে খেলা শুরু হয়েছিল, তৃতীয় টার্মেও সেই একই খেলার পুনরাবৃত্তি।
১) দল ভাঙিয়ে আনার ফল বিজেপি কি বুঝল? এখনও পর্যন্ত যাঁরা তৃণমূলে গেলেন, তাঁরা সবাই তৃণমূল থেকে আসা। এতদিন তৃণমূলে তাঁদের দম বন্ধ হয়ে আসছিল। এবার বিজেপিতে দম বন্ধ হচ্ছে।
২) কেউই কিন্তু ভয়ে যাচ্ছেন না। তার থেকে লোভে যাওয়ার পাল্লা আরও ভারি। এবার কি বিজেপি সতর্ক হবে? নাকি আবার সুযোগ পেলেই দল ভাঙাতে চাইবে?
৩) স্পিকার পদটি ক্রমশ অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ছে। দলত্যাগীরা ভাল করেই জানেন, পদত্যাগ না করলেও তাঁদের কিছুই হবে না। স্পিকার পদকে এভাবে বুড়ো আঙুল দেখানোর রাস্তাটা স্পিকার মশাই নিজেই করে দিয়েছেন।
৪) তৃণমূল থেকে যাঁরা বিজেপিতে যাচ্ছিলেন, তাঁদের এতদিন ‘গদ্দার’ বলা হচ্ছিল। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী অন্তত একশোবার এই শব্দটা ব্যবহার করেছেন। কিন্তু সদ্য বিজেপির টিকিটে জিতে যাঁরা তৃণমূলের পতাকা ধরলেন, তাঁদের সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রী কী বলবেন? এঁরা গদ্দার নন? এই গদ্দারদের আশ্রয় দিতে লজ্জা হয় না? ন্যূনতম মূল্যবোধ থাকলে তাঁদের বলা উচিত ছিল, আগে পদত্যাগ করে তারপর তৃণমূলে যোগ দাও। এটুকু বলার মতো সততাও আজ মুখ্যমন্ত্রীর অবশিষ্ট নেই।
৫) যাঁরা তৃণমূলে ফিরলেন বা ফিরবেন, তাঁদের কারা ভোট দিয়েছেন? যাঁরা তৃণমূলকে পছন্দ করেন না, তাঁরা। কিন্তু তাঁদের রায়ের কী চমৎকার প্রতিদানই না দিলেন এই সদ্য নির্বাচিত বিধায়করা। এক স্ত্রী থাকতে অন্যের সঙ্গে সম্পর্ক থাকলে তাকে চরিত্র হীন বলা হয়। এক দলের টিকিটে জিতে তিন মাসের মধ্যে অন্য দলে নাম লেখালে কেন তাঁদেরও চরিত্রহীন বলা হবে না?