সংরক্ষণের সস্তা হাততালি থেকে এদেশের মুক্তি নেই

সংরক্ষণে কি দেশের গৌরব বাড়ে?‌ যত সংরক্ষণ, তত বেশি পিছিয়ে থাকা। এই সহজ সত্যিটা কোনও দলই বুঝতে চাইছে না। বিজেপি সংরক্ষণের তাস ফেলতে চাইল। সায় দিয়ে ফেলল তামাম বিরোধীরাও!‌ ভোট বড় বালাই। এ দেশটা আর সাবালক হল না। লিখেছেন স্বরূপ গোস্বামী।

আবার সংরক্ষণ। আবার এক সস্তা চমক বিজেপির। আর এই ফাঁদেই পা দিল বিরোধী দলগুলিও। বোঝাই যাচ্ছে, সবার আগে ভোট সত্য, তাহার উপরে নাই। স্বাধীনতার পর পিছিয়ে থাকা জনজাতিকে তুলে আনার উদ্দেশে সংরক্ষণ চালু হয়েছিল। তখন বলা হয়েছিল, এই সংরক্ষণের মেয়াদ থাকবে দশ বছর। জাতির ভিত্তিতে পিছিয়ে পড়া শ্রেণি মূলস্রোতে এসে গেলে আর সংরক্ষণের দরকার হবে না।
দশ বছর তো বটেই, দেখতে দেখতে সত্তর বছর পেরিয়ে গেল। যত দিন যাচ্ছে, নতুন নতুন সংরক্ষণ এসে যাচ্ছে। সংরক্ষণের অক্টোপাশ থেকে এই দেশের মুক্তি নেই। এসসি, এসটি তো ছিলই। এসে গেলে ওবিসি। পঞ্চায়েত ও পুরসভা স্তরে অর্ধেক মহিলা সংরক্ষণও চালু আছে। যে কোনও দিন লোকসভা, বিধানসভাতেও চালু হয়ে যাবে। এর বাইরেও নানা রাজ্যে নানা জাতিগোষ্ঠী সংরক্ষণের দাবি তুলে হইচই করেই চলেছে। ভোটের মুখে নতুন তাস— উচ্চবর্ণের সংরক্ষণ। সাধারণের মধ্যে যাঁরা আর্থিকভাবে ততটা সক্ষম নয়, তাদের জন্য দশ শতাংশ সংরক্ষণ। আপাতভাবে বিষয়টিকে ভাল বলেই মনে হচ্ছে। তাই কোনও দলই সরাসরি বিরোধীতা করার সাহস দেখাচ্ছে না। সংসদে এত বিষয়ে বিরোধিতা থাকলেও এই বিল ধ্বনি ভোটে পাস হয়ে গেল। সেটাই সবথেকে বেশি উদ্বেগের কারণ। কংগ্রেস তো বটেই, তৃণমূল ও বামেরাও এই বিলের পাশে দাঁড়িয়ে গেল। তাঁরাও সরকারের ফাঁদে পা দিল।

loksabha5

একটা কথা খুব সহজভাবেই বলতে চাই, সব দলই শুধু ভোটের কথাই ভাবল। তাই সহজ সত্যিটা কেউ মুখ ফুটে বলতে পারল না। এত সংরক্ষণ যে দেশের পক্ষে মঙ্গল নয়, এটা যে মোটেই ভাল বিজ্ঞাপন নয়, এই সহজ কথাটা সহজভাবে কোনও দলই বলতে পারল না? পক্ষে ভোট পড়ল ৩২৩, বিপক্ষে মাত্র ৩!‌

জাতির ভিত্তিতে নয়, অর্থনৈতিক মানদণ্ডে সংরক্ষণ হোক। এমন দাবি নানা সময়েই উঠে আসে। দাবিটি অনেকটাই যুক্তিপূর্ণ। যদিও বাস্তবে প্রয়োগ করা কঠিন। যাঁরা মনে করছেন, এই বিল অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকা মানুষদের জন্য, তাই সমর্থন করা দরকার, তাঁদের কাছে বিনীতভাবে জানতে চাই, তাহলে জাতিগত সংরক্ষণ তুলে দেওয়ার দাবিটাও তুলুন। একইসঙ্গে জাতিগত সংরক্ষণও থাকবে আবার অর্থনৈতিক মানদন্ডে উচ্চ জাতের সংরক্ষণও থাকবে, দুটো একসঙ্গে চলতে পারে না। এ অনেকটা গাছেরও খাব, তলারও কুড়োবো গোছের সুবিধাবাদী একটা ব্যবস্থা।

এই সংরক্ষণে সত্যিই কাদের উপকার হবে?‌ গরিব আর ধনী লোকেদের যে মাপকাঠি নির্ধারণ করা হয়েছে, তা একেবারেই হাস্যকর। পাঁচ একর পর্যন্ত জমি থাকলে বা এক হাজার স্কোয়্যার ফিটের নিচে বাড়ি থাকলে তারা গরিব। ভেবে দেখুন, দিল্লি, মুম্বই বা বেঙ্গালুরুতে এক হাজার স্কোয়্যার ফুটের বাড়ির দাম কত?‌ পাঁচ একর জমির দাম কত?‌ তাঁরা গরিব!‌ তাঁদের কি সত্যিই সংরক্ষণের প্রয়োজন?‌ অর্থাৎ, এবারেও সংরক্ষণের ক্ষিরটা সেই ‘‌অভিজাত গরিব’‌রাই পাবেন। শুধুমাত্র ভোট হারানোর ভয়ে সব দল এরকম একটা বিলে সায় দিয়ে ফেলল। কেউ সামান্য বিরোধিতা করার সৎসাহস দেখাল না।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.