কী হারালেন, নির্মল যদি বুঝতেন!‌

রবি কর
রাজধর্ম কাকে বলে, দেখিয়ে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দূরদৃষ্টি কাকে বলে, দেখিয়ে দিলেন।
অনেকেই বলে, বিশেষ করে এই কুচুটে বামপন্থীরা বলে, মমতাদিদি চাটুকারদের পছন্দ করেন। যারা তাঁর হাওয়াই চটিকে তেল মাখায়, তাদেরই তিনি বেছে বেছে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসান। যে দেবে যত তেল, তার হবে তত বড় ‘‌টেল’‌। যেমন আগে ছিল শোভন। মেয়র, জেলা সভাপতি, তিন–‌তিনটে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রক। লেজ তো নয়, যেন অ্যানাকোন্ডা। এখন আবার ববির লেজ লম্বা হচ্ছে। না, না, আমি বলছি না। কুচুটেরা বলছে।
বলছে, এই যে চারজন নতুন মন্ত্রী নেওয়া হল, এরাও নাকি চাটুকারিতার পুরস্কার পেয়েছে। এই কুচুটেদের মধ্যে পয়লা নম্বর হল বেঙ্গল টাইমস। বলে কিনা সুজিত বোস কাট আউট লাগিয়ে লাগিয়ে মন্ত্রী হয়েছে। আরও বলে কিনা এতকিছুর পরেও নির্মল মাজি মন্ত্রী!‌

nirmal maji
এতকিছু মানে কী রে ড্যাবরা, এত কিছু মানে কী?‌ ওরে, কাকে কেন মন্ত্রী করা হল, তা যদি তোরা বুঝতিস, তাহলে সাংবাদিক না হয়ে তোরাই মুখ্যমন্ত্রী হতিস। মুখ্যমন্ত্রী হতে গেলে দূরদৃষ্টি লাগে। রাজধর্ম পালন করতে হয়।
রাজধর্ম মানে কী?‌ দুষ্টের দমন, আর শিষ্টের পালন। দূরদৃষ্টি মানে কী?‌ ভবিষ্যতে কী হবে, তা আগাম দেখতে পাওয়া। একজন প্রকৃত শাসকের মধ্যে এই দুটোই থাকতে হয়। এবং সঠিক অনুপাতে থাকতে হয়। অনুপাতে গন্ডগোল হলেই মুশকিল। মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে এই দুইয়েরই ফিফটি ফিফটি মিশ্রণ আছে।
তিনি তাঁর দূরদৃষ্টি দিয়ে বুঝতে পারেন, ‘‌দুষ্টের দমন’ করতে গেলে বেশিদিন ‘‌রাজধর্ম’‌ পালন করা যাবে না। ‌ছোট ছোট দুষ্টু ভাইরা রাজত্বটাই উল্টে দেবে। তাই তিনি এমন চাল চাললেন, যাতে ‘‌সাপও মরবে, লাঠিও ভাঙবে না’‌। ‘‌স্বাস্থ্য বাঁচবে, অথচ নির্মল চটবে না’‌। সোজা কথায়, মাঝির হাত থেকে দাঁড় কেড়ে নিয়ে নৌকা থেকে নামিয়ে দিলেন।
এই যে বেঙ্গল টাইমস বলল, এতকিছুর পরেও নির্মল মাজি মন্ত্রী!‌ তা এই এতকিছু তিনি কোথায় করেছেন?‌ করেছেন সরকারি হাসপাতালে। সরকারি ভাবে কোনও ক্ষমতা নেই, তাও করেছেন। হয়ত ক্ষমতা নেই, সেই ক্ষোভ থেকে আরও বেশি বেশি করে করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী বুঝেছেন, এই ব্যক্তির হাতে ক্ষমতা না দিলে, একে খুশি করা মুশকিল। কিন্তু স্বাস্থ্য দপ্তরের ক্ষমতা হাতে দিলে আরও মুশকিল। এমনিতেই পিজিতে কুকুরের ডায়ালিসিস করতে গিয়েছিলেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী হলে হয়ত নবান্নে ভেটেনারি চিকিৎসা কেন্দ্র খুলে দেবেন।
তাই তিনি নির্মলকে মন্ত্রী করলেন, কিন্তু স্বাস্থ্য দপ্তরের দায়িত্ব না দিয়ে, শ্রম দপ্তরের আধা দায়িত্ব দিলেন। এখন এখন আধা থেকে ফুল মন্ত্রী হওয়ার জন্য তিনি উঠেপড়ে কাজ করবেন। শ্রম দপ্তরের কাজে যত শ্রম দেবেন, স্বাস্থ্য দপ্তরের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ তত বিচ্ছিন্ন হবে। যত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হবে, তত স্বাস্থ্য দপ্তরের স্বাস্থ্য ফিরবে।
চাইলে কি স্বাস্থ্য দপ্তরের নৌকার দায়িত্ব মাঝিকে দিতে পারতেন না?‌ কিন্তু তিনি দেননি। কারণ, তাঁর দূরদৃষ্টি আছে। তাঁর ভাইদের তিনি ভালভাবেই জানেন। তিনি জানেন, এ মাঝি এমন মাঝি, যাঁর হাতে দাঁড় না দিলেই মঙ্গল। তাই তিনি তাঁকে এমন একটি দপ্তরের দায়িত্ব দিলেন, যার সঙ্গে তাঁর কোনও যোগাযোগই নেই। এককথায় দিদি নির্মলের দমন ও স্বাস্থ্যের পালন করলেন। অথচ, নির্মল খুশি হল। সাধে কি তিনি মুখ্যমন্ত্রীর পাশাপাশি স্বাস্থ্যমন্ত্রী!‌ নির্মলের চিকিৎসা কীভাবে করতে হয়, তা তিনি ভালই বুঝেছেন।

পুনশ্চ:‌ এর আগে দিদিমণি অনুব্রতকে রাজ্যসভায় পাঠিয়ে একইরকম রাজধর্ম পালন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কেষ্টার দূরদৃষ্টি দিদির থেকেও বেশি। সে কিছুতেই দিদির এই ফাঁদে পা দেয়নি। নির্মল যদি কেষ্টাকে দেখে শিখতেন!‌

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.