সরল বিশ্বাস
কিছু একটা ঘটলেই সিবিআই তদন্ত চাওয়ার রেওয়াজটা অনেক পুরনো। গত দু মাস ধরে সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুকে ঘিরেও এই দাবিটা উঠছে। অবশেষে সুপ্রিম কোর্ট চূড়ান্ত সিলমোহর দিল।
অনেকেই কোর্টের এই রায়কে স্বাগত জানাচ্ছেন। অনেকে ভেবে নিয়েছেন, এবার সুশান্তের মৃত্যু রহস্যের ঠিকঠাক কিনারা হবে। কিন্তু সত্যিই কি সিবিআই এতখানি ভরসার জায়গায় আছে? গত কয়েক বছরে সিবিআই–এর ভূমিকা মোটেই আশাব্যঞ্জক নয়। একের পর এক মামলায় তা পরীক্ষিত ও প্রমাণিত। তারপরেও সিবিআইয়ের ওপর এমন ভরসা করার কোনও যুক্তি খুঁজে পাচ্ছি না।
এখন কোনও মামলার সিবিআই তদন্ত মানে, সেই মামলা অনন্তকাল ঝুলে গেল। মাঝে মাঝে লোকদেখানো জেরা হবে। দু একটা গ্রেপ্তারির ঘটনা ঘটবে। টিভির অ্যাঙ্কররা ব্রেকিং নিউজের নামে একটা যুদ্ধ–যুদ্ধ আবহ তৈরি করবেন। কাগজে নানা গালগল্প লেখা হবে। কিন্তু বিষয়টি যে তিমিরে, সেই তিমিরেই থেকে যাবে।
আমাদের রাজ্যে সারদা–নারদার ক্ষেত্রে সিবিআই–কে এমন ভূমিকাতেই দেখা গেছে। মাঝে মাঝে হঠাৎ সক্রিয়তা দেখা যায়। হইচই হয়। আবার সাতদিন যেতে না যেতেই সিবিআই কর্তারা ঘুমিয়ে পড়েন। কেউ কেউ বলেন, ঘুম পাড়িয়ে দেওয়া হয়।
সিবিআই হোক, আপত্তি নেই। কিন্তু তদন্তের নামে অনন্ত সময় ধরে ঝুলিয়ে রাখা চলবে না। এটা খুন না আত্মহত্যা, সেটা বুঝতে এক বছর লাগার কথা নয়। এটা বুঝতে বড়জোর সাতদিন লাগতে পারে। যদি খুন হয়, তাহলে খুনি কে? এটা বুঝতেও সতেরো বছর লাগার কথা নয়। সদিচ্ছা ও তৎপরতা থাকলে একমাসেই খুনিকে ধরা সম্ভব। যদি তা না পারে, তাহলে বুঝতে হবে, পাঁচ বছরেও হবে না।
সিবিআই কোনও প্রাইভেট ডিটেক্টিভ এজেন্সি নয়। জনতার ট্যাক্সের টাকাতেই সিবিআই–এর প্রতিপালন হয়। তাই সিবিআই–এর কাজকর্ম নিয়ে মতামত জানানোর অধিকার করদাতা জনতার অবশ্যই আছে। তাই, যঁারা সিবিআই–এর নাম তুলে আনন্দে নৃত্য করছেন, তাঁরা দাবি তুলুন, একমাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে হবে। সিবিআই তদন্তের নামে কী অশ্বডিম্ব প্রসব করল, সে ব্যাপারে সর্বোচ্চ আদালতের একটা তদারকি থাকুক। এমনিতেই দীর্ঘসূত্রিতার ব্যাপারে কোর্টের একটা সার্বজনীন দুর্নাম আছে। এক্ষেত্রে কোর্টের সামনেও সুযোগ, সেই দুর্নাম কাটিয়ে নিজেদের বিশ্বাসযোগ্যতা ফিরিয়ে আনার।