এই অরাজকতায় কিন্তু বিজেপিই অক্সিজেন পাচ্ছে

সরল বিশ্বাস

বিল যখন পেশ হল, তখন তা যে পাস হবে, সেটা জানাই ছিল। সংখ্যার দিক দিয়ে নিশ্চিত হয়েই বিল এনেছিল কেন্দ্র। তারপর থেকে পরিস্থিতি যে উত্তপ্ত হবে, তা নিয়েও সংশয় ছিল না। এতবড় একটা সিদ্ধান্ত মাত্র দুদিনে নেওয়া হয়ে গেল। ।যুদ্ধকালীন তৎপরতায় বিল পাস হয়ে গেল। রাত বিরেতে রাষ্ট্রপতির সইও হয়ে গেল। এত কীসের তাড়া? কোর্টও যে দার্শনিক প্রশ্রয়দাতার ভূমিকা পালন করবে, সেটাও এখনই বলে দেওয়া যায়। গোটা দেশে যেন আর কোনও সমস্যা নেই। হিন্দু, মুসলিম, পাকিস্তান, কাশ্মীর— এসব আলোচনাই গত কয়েকবছর ধরে ঘুরপাক খাচ্ছে। সব দলই কম বেশি অক্সিজেন দিয়ে যাচ্ছে এইসব আলোচনায়।

গোটা দেশের মতো উত্তপ্ত আমাদের বাংলাও। কোথাও স্টেশন ভাঙচুর হচ্ছে। কোথাও ট্রেনে ঢিল ছোঁড়া হচ্ছে। বিষয়টা নিছক কেন্দ্রবিরোধী আন্দোলনে সীমাবদ্ধ থাকছে না। কোথাও কোথাও দিব্যি বাসও জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আর এসব কাণ্ডের পর যা হয়! হোয়াটসঅ্যাপে, ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ছে নানা গুজব। লোকে বিশ্বাসও করছেন। আবার যেন ভয়াবহ এক পরিস্থিতি।

open forum3

কিন্তু এমন পরিস্থিতি কি এড়ানো যেত না? কোনও সন্দেহ নেই, যাঁরা ভাঙচুর করছেন, আগুন জ্বালাচ্ছেন, তাঁরা আর যাই হোক কোনও গণতান্ত্রিক আন্দোলন করছেন না। এর সঙ্গে গুন্ডামির কোনও ফারাক নেই। কোনও স্বতস্ফূর্ত আবেগ থেকেও এইসব অপকর্ম হচ্ছে না। এগুলো করানো হচ্ছে। কারা করাচ্ছেন, তা নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে।

চতুর্থ দিনের মাথায় মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, বিজেপি টাকা দিয়ে এইসব করাচ্ছে। তাহলে যাঁরা এইসব কাণ্ড করছে, তাঁদের প্রতি ধিক্কার দিতে এত দ্বিধা কেন? কেন বলা যাচ্ছে না, এসব যাঁরা করছেন, তাঁরা দুষ্কৃতী। তাঁদের ধিক্কার জানাই। কেন তাঁদের বলতে হচ্ছে দয়া করে এসব করবেন না। এই দয়াভিক্ষা কি খুব জরুরি ছিল! কথায় কথায় রাফ অ্যান্ড টাফ— আস্ফালন শোনা যায়। এখন একটু রাফ অ্যান্ড টাফ হওয়া যেত না!  বিরোধীদের রাজনৈতিক আন্দোলনকে থামাতে পুলিশ এত সক্রিয় থাকে, এই গুন্ডামিকে থামাতে তার কনামাত্র সক্রিয়তা দেখা গেল না কেন?

জেলায় জেলায় খোঁজ নিলেই দেখা যাবে, প্রথমদিন  এই ভাঙচুর, এই হিংস্র আন্দোলনে কাদের মদত ছিল। তখন কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সবাই ক্ষিপ্ত, এমন একটা ছবি তুলে ধরা দরকার ছিল। কিন্তু তারপর পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে গেল। এটাই তো হওয়ার ছিল। কাউকে ট্রেনে ঢিল ছুঁড়তে শেখালে সে শুধু ট্রেনে ঢিল ছুঁড়ে ক্ষান্ত হবে না। সে বাসেও আগুন ধরাবে।

এইসব ঝামেলায় কার রাজনৈতিক লাভ হল? নিঃসন্দেহে বিজেপির। তারা যে ছবিটা দেখাতে চায়, সেই ছবিটা দেখানোর সুযোগ পেয়ে গেল। এমনিতেই বছরভর ফেক ছবির ছড়াছড়ি। এবার আর ফেক ছবি ছড়াতে হবে না। একেবারে টাটকা ছবিই তারা পেয়ে গেল। আর এইসব ছবিকে ঘিরে কীভাবে হিংসা ছড়াতে হয়, বিজেপির সাইবার সেল তা খুব ভাল জানে। এবারও তাঁদের হাতে অস্ত্রটা তুলে দিলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। এর কড়া মাশুল তাঁকেই দিতে হবে।

 

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.