লাইব্রেরিটা কোনদিকে, কজন বিধায়ক জানেন!

সরল বিশ্বাস

‌বিধানসভায় বিরোধী এক বিধায়ক প্রস্তাব এনেছেন, অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বই বিধানসভার লাইব্রেরিতে রাখা হোক। তিনি তাঁর লেখায় কী বলতে চেয়েছেন, সকলের জানা উচিত।
এমন প্রস্তাবে আপত্তি আসার কথা নয়। স্পিকার মশাই এক কথায় রাজি হয়ে গেছেন। পরিষদীয় মন্ত্রীরও আপত্তি থাকার কথা নয়। কিন্তু মুশকিলটা হল, বইগুলো না হয় আনা হল। বিধানসভায় সাজিয়েও রাখা হল। কিন্তু পড়ার লোক কই?‌ ওই বই পড়ার ও বোঝার যোগ্যতা কজনের আছে?‌
স্পিকার মশাই খুব উদ্বিগ্ন, বিধানসভার লাইব্রেরিতে ভাল ভাল বই আছে। কিন্তু বিধায়করা যাচ্ছেন না। এই উদ্বেগটা অনেকদিন ধরেই শোনা যাচ্ছে। আগে যদিও কেউ কেউ যেতেন। এখন সেই অভ্যেসটা একেবারেই চলে গেছে। হাতে গোনা দু–‌‌কজন হয়ত যান। অধিকাংশ বিধায়ক বোধ হয় জানেনও না যে লাইব্রেরিটা কোনদিকে। জানার আগ্রহও নেই। এমন এমন লোককে বিধায়ক করে আনা হয়েছে, যাঁদের সঙ্গে পড়াশোনার তেমন সম্পর্কই নেই।
বিধানসভায় বিতর্কের মান শুনলেই বোঝা যায়, পড়াশোনার লেবেলটা ঠিক কোন পর্যায়ে দাঁড়িয়ে আছে। অধিকাংশ মন্ত্রী এমন আজগুবি, যুক্তিহীন কথা বলে যান, যার সঙ্গে পড়াশোনার, যুক্তির কোনও সম্পর্কই থাকে না। হল্লাবাজিটা রোজকার রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। মন্ত্রীরা হল্লা করছেন। বিরোধীরা কথায় কথায় ওয়াকআউট করছেন। রোজ ওয়েলে নেমে পড়ছেন। সংসদীয় রীতিনীতি, শিষ্টাচার মেনে চলার দায় যেন কোনও দায় নেই। অধিকাংশ মন্ত্রী নিজেদের দপ্তর সম্পর্কে, সেই দপ্তরের কাজকর্ম সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নন। অধিকাংশ দপ্তরের বাজেট আলোচনা হয় না। দিব্যি গিলোটিনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আলোচনাই যদি না হয়, তাহলে পড়াশোনার তাগিদটা থাকবে কী করে?‌

assembly2
এ ব্যাপারে স্বয়ং অধ্যক্ষকেও অভিযুক্ত করা যায়। তিনিও আগেকার বিধানসভার প্রসিডিংসগুলো পড়ে দেখেছেন কিনা সন্দেহ আছে। অন্তত কাজকর্মে তার ন্যূনতম প্রতিফলন নেই। অতীতে কখন, কোন কোন ইস্যুতে মুলতুবি প্রস্তাব এসেছে, কোন কোন বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণী প্রস্তাব এসেছে, জিরো আওয়ারে কী কী আলোচনা হয়েছে, কী কী বেসরকারি প্রস্তাব এসেছে, স্ট্যান্ডিং কমিটির রিপোর্টই বা কী ছিল, এসব সম্পর্কে তিনি পড়াশোনা করেছেন বলে মনে হয় না। স্পিকারের দায়িত্ব হাসিম আব্দুল হালিম বা তাঁরও পূর্বসূরিরা কীভাবে সামলেছেন, সে সম্পর্কে পড়াশোনা নিতান্তই কম। কোনও ব্যাপারে সাংবিধানিক সমস্যা হলে, বা আইনের অন্য ব্যাখ্যা শোনার জন্য কীভাবে সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়, জয়নাল আবেদিন, জ্ঞান সিং সোহনপাল, মানস ভুঁইয়া, সৌগত রায়দের মতামত নিতেন। এখনকার বিধানসভায় সেই সংস্কৃতিটাই নেই। বিএ কমিটির মিটিংয়ে কীভাবে আলোচনা হত, সে সম্পর্কেও কোনও ধারনা আছে বলে মনে হয় না। তাহলে, এভাবে মুলতুবি প্রস্তাবকে চিরচরে মুলতুবিতে পাঠিয়ে দিতে পারতেন না। প্রশ্নোত্তর পর্বকে এভাবে প্রহসনের শিকার হতে হত না। একের পর এক দপ্তরের বাজেটকে গিলোটিনে পাঠাতে পারতেন না।
তাই লাইব্রেরিতে অন্যান্য বিধায়করা যান কিনা, সেই ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশের আগে নিজে বরং লাইব্রেরিতে যাওয়ার অভ্যেসটা তৈরি করুন। পদাধিকার বলে তিনি অবশ্য নিজের চেম্বারেও বই আনিয়ে পড়ে নিতে পারেন। আগের বিধানসভার চরিত্রগুলো বোঝার চেষ্টা করুন। তাহলে বুঝতে পারবেন, বিধানসভা কীভাবে চালাতে হয়। তাহলে, বুঝতে পারবেন, আপনি কত হাজার মাইল পিছিয়ে আছেন।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.