বেঙ্গল টাইমস প্রতিবেদন: এই রাজ্যে কি এন আর সি চালুর কোনও সম্ভাবনা আছে? পরে কী হবে, বলা মুশকিল। তবে, আপাতত তেমন কোনও সম্ভাবনা নেই। কেন্দ্র চাইলেও নয়। রাজ্য বিজেপি লাফালাফি করলেও নয়। তাহলে, এন আর সি নিয়ে এতখানি আতঙ্ক ছড়িয়ে গেল কীভাবে? এই আতঙ্ক ছড়িয়ে যাওয়ার পেছনে বিজেপি যত না দায়ী, তার থেকে ঢের বেশি দায়ী তৃণমূল। এমনকী বাম বা কংগ্রেসও পিছিয়ে নেই। তাঁরাও বিভিন্ন সভা সমিতিতে এন আর সি নিয়ে অহেতুক সময় নষ্ট করছেন। অহেতুক আতঙ্ক তৈরি করছেন। যাতে আখেরে লাভ হচ্ছে বিজেপির।
রাজ্যে ক্ষমতার হাতবদল ঘটলে কী হবে, বলা মুশকিল। কিন্তু যতক্ষণ না বিজেপি আসছে, ততক্ষণ নিশ্চয় এন আর সি প্রক্রিয়া শুরু হবে না। তাহলে, আগ বাড়িয়ে বিধানসভায় তা নথিবদ্ধ করার কী দরকার ছিল? এন আর সি নিয়ে যত আলোচনা হবে, তাতে বিজেপিরই লাভ। তারা উন্নয়নের মানদন্ডে পিছিয়ে গিয়ে কখনও কাশ্মীর, কখনও পাকিস্তান, কখনও হিন্দু, কখনও এন আর সি এসব করে গুলিয়ে দিতে চাইছে। সেই ফাঁদে বিরোধীরাও পা দিচ্ছে। তাঁদের আলোচনা থেকেও উন্নয়ন হারিয়ে যাচ্ছে। যেসব আলোচনা বিজেপি চায়, সেই আলোচনাতে বিরোধীরাও মেতে থাকছে।
বিজেপি যতই দাবি তুলুক, এই দাবিকে বিশেষ পাত্তা দেওয়ারই দরকার নেই। যত আলোচনা হবে, তত বিজেপিরই সুবিধা। বুঝে হোক, না বুঝে হোক, অনেকে সেদিকেই ঝুঁকে যাবেন। বিধানসভায় এটা নথিবদ্ধ হয়ে গেল মানে, বাংলায় এই বাস্তবতাকে কার্যত স্বীকার করে নেওয়া হল। ৬ জনের বিরুদ্ধে প্রস্তাব আনতে কিনা সব দলকে এক হতে হল!
তৃণমূল, বাম, কংগ্রেস — সবাই একযোগে বলতে শুরু করেছে, বাংলায় এন আর সি মানব না। আরে বাবা, বাংলায় এন আর সি আনছেটা কেন? নাগরিক আইন সংশোধন করার আগে এন আর সি আনার মতো মূর্খামি বিজেপি দেখাবে বলে মনে হয়! বিজেপি ভাল করেই জানে, মুসলিম ভোট তাদের বাক্সে খুব একটা আসবে না। তাই বাকি হিন্দু ভোটকে একদিকে টেনে আনার একটাই রাস্তা, অনুপ্রবেশের হাওয়া ছড়িয়ে দাও। পাশাপাশি হিন্দুদের আশ্বস্ত করা হচ্ছে, চিন্তার কিছু নেই। তোমাদের ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই। বিজেপি জানে, মুসলিমদের জব্দ করা হচ্ছে শুনলেই হাত তুলে সমর্থন কার লোকের অভাব হবে না। তখন সব অপকর্ম ঢাকা পড়ে যাবে। সব ব্যর্থতা পেছনের সারিতে চলে যাবে। এই আলোচনাতেই সবাই মশগুল থাকবে।
কিন্তু বিরোধীরা বুঝেও বুঝতে চাইছে না। উল্টে আবোল–তাবোল বকতে গিয়ে মানুষের থেকে আরও দূরে সরে যাচ্ছে। বিজেপির তৈরি ইস্যু নিয়ে অকারণে হইচই করে সেটাকেই প্রাসঙ্গিক করে তুলছে। বিরোধীতা করতে গিয়ে শাসকের পক্ষে জনমত তৈরি করে দিচ্ছে। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকজন নাকি এনআরসি–র দুশ্চিন্তায় আত্মঘাতী হয়েছেন। কাগজে বড় করে সেসব খবর বেরোচ্ছে। সরকারি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার লোভ সামলাতে পারবে না। আস্তে আস্তে এটা মহামারির আকার নেবে। সাধারণ কারণে আত্মহত্যা হলেও তা এন আর সি–র নামে চালানো হবে। কারণ, একবার এন আর সি ব্যাপারটা খাইয়ে দিতে পারলেই ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত। চাকরিও জুটে যেতে পারে।
তাই, এন আর সি নিয়ে আতঙ্ক ছড়ানো বন্ধ হোক। শুধু আবেদন জানালেই হবে না। ক্ষতিপূরণ দেওয়ার, হাততালি নেওয়ার লোভটাও সামলাতে হবে। নইলে, এটাও ব্যুমেরাং হয়ে উঠবে।