ভাগ্যিস বলেননি খুনের চেষ্টা হয়েছিল

ধীমান সাহা

এখনও একটা প্রবাদ শোনা যায়, জ্যোতি বসুর ঘুমের ব্যাঘাত হচ্ছিল বলে নাকি সল্টলেকে সব শেয়াল মেরে ফেলা হয়েছিল। যিনি এই প্রচারটা ছড়িয়ে দিয়েছিলেন, তিনি আজ আর বেঁচে নেই। কিন্তু গল্পের গরু গাছে ওঠার মতো এই প্রচারটা রয়ে গেছে।

এবার মুখ্যমন্ত্রীর উত্তরবঙ্গ সফরের সময় কী হল?‌ কয়েক মিনিটের জন্য লোডশেডিং। জেনারেটর ছিল, তবে চালাতে হয়ত দু–‌তিন মিনিট সময় লেগেছে। অমনি সরকারি মিটিংয়ের মঞ্চে রেগে অগ্নিশর্মা মুখ্যমন্ত্রী। কেন লোডশেডিং হবে?‌ মঞ্চ থেকেই বলে দিলেন, ব্যবস্থা নিতে হবে।

মুখ্যমন্ত্রী বলে কথা। তিনি রেগে গেছেন, অতএব কিছু একটা করতেই হবে। ধরে আনতে বললে, বেঁধে আনতে হবে। তড়িঘড়ি সেই বিদ্যুৎ বন্টনের অফিসারদের সাসপেন্ড করা হল। এই নাকি অনাড়ম্বর জীবন যাপন করা মুখ্যমন্ত্রী। মাত্র কয়েক মিনিট আলো নেই বলে আধিকারিকদের সাসপেন্ড করা হল?‌ ভাগ্যিস বলা হয়নি, তাঁকে খুনের চক্রান্ত হয়েছিল, তাই আলো নিভিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তাঁর যা ধারাবাহিকতা, তাতে এমনটা বললে অবাক হওয়ার কিছু ছিল না।

mamata banerjee2

রাজ্যের প্রায় প্রতিটি ব্লকে উন্নয়ন দাঁড়িয়ে রইল। তখন মুখ্যমন্ত্রী নিশ্চুপ। প্রায় সত্তর শতাংশ মানুষ ভোটই দিতে পারলেন না। তখনও তাঁকে রাগতে দেখা যায়নি। এতকিছুর পরেও যেখানে যেখানে বিরোধীরা জিতেছে, তাদের বোর্ড গড়তে দেওয়া হচ্ছে না, এতেও তিনি নিশ্চুপ। বালি, কয়লা আর গরু। এই তিন পাচারের টাকা কোথায় যাচ্ছে, রাজ্যসুদ্ধু সবাই জানে। শুধু তিনি জানেন না। প্রতিটি জেলায় পুলিস কার্যত মেরুদন্ডহীন–‌ অসহায়, তখনও তিনি রাগেন না। রাগেন শুধু দু মিনিট লোডশেডিং হয়ে গেলে। এই না হলে মানবদরদী মুখ্যমন্ত্রী!‌

অফিসারদের কাছে কী বার্তা গেল?‌ তাঁদের যেটা আসল কাজ, সেটা না করলেও চলবে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর সেবাযত্নের যেন কোনও ত্রুটি না হয়। মুখ্যমন্ত্রী এলে একমাস আগে থেকে সব কাজ ফেলে মুখ্যমন্ত্রীর সফর নির্ঝঞ্ঝাট করতে হবে। প্রতিটি জেলা সফর হয়ে উঠেছে সরকারি অপচয় আর সস্তা নাটকের প্রদর্শনী। যেখানে তিনি সবার সামনে সব অফিসার, মন্ত্রীদের অপমান করে যাবেন। সব দোষ অন্যদের ঘাড়ে চাপিয়ে নিজে মহান হবেন। আর কাগজে কাগজে পাতা জোড়া বিজ্ঞাপন।

এই বিজ্ঞাপন বেরোয় বলেই কাগজগুলির মুখ বন্ধ। চ্যানেলগুলির মুখ বন্ধ। কী অবলীলায় অফিসারদের সাসপেন্ড করা হচ্ছে। কোথাও কোনও প্রতিবাদ নেই। যে কাগজ শেয়ালের গল্প ফেঁদেছিল, তাঁরাও কী নির্লজ্জ চাটুকারিতা করে চলেছে।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.