উত্তম জানা
কংগ্রেসের তিন বিধায়ক পদত্যাগ করলেন। তাঁরা হলেন আবু তাহের খান, অপূর্ব সরকার, কানাইয়ালাল আগরওয়াল। কারণ, এই তিনজনই তৃণমূলের টিকিটে এবার লোকসভা ভোটে লড়বেন। না, কোনও নৈতিকতার কারণে এই তিনজন পদত্যাগ করলেন, এমন ভাবার কোনও কারণ নেই। কানাইয়ালাল জেতার পরেই যোগ দিয়েছিলেন তৃণমূলে। অপূর্ব সরকার বহুদিন ধরেই যাব যাব করছিলেন। আবু তাহেরও তাই। তাঁরাও তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন বহুদিন আগেই। এতদিন তাঁদের পদত্যাগ করার কথা মাথায় আসেনি। কারণ, তাঁরা জানতেন, এই রাজ্যে এমন একজন স্পিকার আছেন, যিনি গত আট বছরে এত এত বিধায়ক দলত্যাগ করার পরেও কাউকে শাস্তি দিতে পারেননি। নানা বাহানায় প্রত্যেককে আড়াল করে গেছেন।
তাঁরা যখন পদত্যাগ করছেন, তখন স্পিকার মশাই নাকি তাঁদের জিজ্ঞেস করেন, চাপের মুখে পদত্যাগ করছেন না তো? এটা হয়ত প্রোটোকল। হয়ত প্রথামাফিক এমনটা জিজ্ঞেস করতে হয়। আসলে, স্পিকার সাহেব আগের প্রথাগুলো মানেননি। বিরক্ত হয়ে বিরোধীরা অভিযোগ জানানোই ছেড়ে দিয়েছেন। তাঁরাও জানেন, এই স্পিকারের হিম্মৎ নেই আইন অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়ার।
স্পিকার বরং এই তিনজনকে উল্টো প্রশ্ন করতে পারতেন। বরং, জিজ্ঞেস করতে পারতেন, দল ছেড়েছেন তো অনেকদিন। তাহলে, এতদিন পদত্যাগ করেননি কেন? আবু তাহেরকে না হয় তবু বামেদের সঙ্গেও লড়তে হয়েছে (যদিও সিপিএমের মদত পেয়েছেন পুরো মাত্রায়)। কিন্তু কানাইয়ালাল বা অপূর্বর জেতার পেছনে অনেকটাই ছিল বামেদের অবদান। বামেদের সঙ্গে জোট করেই তাঁরা বিধায়ক। আরও স্পষ্ট করে বলতে গেলে, তৃণমূল বিরোধী মানুষের ভোটেই তাঁরা বিধায়ক। তার পরেও কী অবলীলায় শাসক দলের পতাকা হাতে ধরে নিয়েছিলেন। পদত্যাগ তো দূরের কথা, উল্টে যাঁদের ভোটে জিতলেন, তাঁদেরই আক্রমণ করে চলেছিলেন।
তাঁরা তাহলে কেন পদত্যাগ করলেন? আসলে, বাধ্য হলেন। বিধানসভার সদস্যপদ হয়ত এত সহজে যেত না। কারণ, স্পিকার মশাই যথারীতি নানা টালবাহানা দেখিয়ে তাঁদের রক্ষা করে যেতেন। সময় দিয়ে যেতেন। তাঁরাও নানা অজুহাতে সেই শুনানি এড়িয়ে চলতেন। এভাবেই দু বছর কেটে যেত। সোজা কথা, হয়ত লোকসভার প্রার্থীপদ খারিজ হয়ে যেত। সেই কারণেই এই পদত্যাগ। তাই, এই পদত্যাগের সঙ্গে নৈতিকতার কোনও সম্পর্কই নেই। নিতান্ত বাধ্য হয়েই এই পদত্যাগ। দোহাই, ‘নৈতিক কারণে পদত্যাগ’ বলে নৈতিকতা শব্দটার অপমান করবেন না।