নির্মল দত্ত
এই পাঁচ বছরে নরেন্দ্র মোদি নাকি অনেক কিছুই শিখলেন। লোকসভায় শেষ ভাষণে এরকম একটা বাক্যের পর মনে হয়েছিল, কিছু ইতিবাচক কথাই বলবেন। কিন্তু দেখা গেল, বিদায়ী ভাষণেও তিনি একইরকম আছেন। অন্যকে কথায় কথায় খোঁচা দেওয়ার স্বভাবটা একেবারেই গেল না। টার্গেট সেই রাহুল। বোঝাই গেল, এই পাঁচ বছরে অনেক কিছুই তাঁর না শেখাই থেকে গেল।
১) শাসকের কী দায়িত্ব, বুঝে উঠতেই পারলেন না। নিজেকে সঙ্কীর্ণ দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে একেবারেই তুলতে পারেননি।
২) কোনটা সরকারি মঞ্চে বলতে হয়, কোনটা বলতে নেই, এই মাত্রাজ্ঞানটা একেবারেই আয়ত্ব করতে পারেননি। তাই সরকারি মঞ্চ থেকেও অবলীলায় দলীয় প্রচার চালিয়ে গেছেন।
৩) প্রথমদিন সংসদে প্রণাম করে ঢুকেছিলেন। কিন্তু সংসদ সম্পর্কে তেমন শ্রদ্ধা দেখা যায়নি পাঁচ বছরে। বেশিরভাগ সময়ে লোকসভাকে এড়িয়ে থেকেছেন। বিরোধীদের ন্যূনতম মর্যাদা দিতেও শেখেননি। সেখানে সরকারের নেতা নন, দেশের নেতা নন, একেবারে দলের নেতাই থেকে গেছেন।
৪) সংসদের মান অনেকটাই নেমে গেছে। সংসদ আরও বেশ করে হল্লাবাজির আখড়া হয়ে উঠেছে। বিরোধীরা একটু চিৎকার করবেন, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সরকারকে অনেক সংযত থাকতে হয়। সমালোচনা শুনতে হয়। সেই মানসিকতা তাঁর নেই। তাঁর দলেরও নেই। এবং সংসদের চিৎকারে রাশ টানার চেষ্টা করেননি। অন্য দলের চিৎকারে হয়ত রাশ টানা মুশকিল, নিজের দলকে তো নিয়ন্ত্রণ করা যেত। সেই কাজে সম্পূর্ণই ব্যর্থ।
৫) সরকার ঘৃণা ছড়িয়ে যাচ্ছে! এটা আগে কখনও দেখা যায়নি। কোনওকিছুর দায় না নিয়ে অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দাও।
৬) কোনও প্রধানমন্ত্রী তাঁর পূর্বসূরীদের এভাবে অপমান করেননি। কিন্তু তিনি কথায় কথায় নেহরুকে টেনে এনেছেন। ইন্দিরা, রাজীব, মনমোহনকেও টেনে এনেছেন। বাকি সবাই অপদার্থ, একমাত্র তিনিই যোগ্য, সারাক্ষণ এমন ঢাক পিটিয়ে গেছেন। নিজের ব্যর্থতার দায়ও পারলে নেহরুর ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছেন।
৭) বিদেশে গিয়ে নিজের দেশকে ছোট করতে নেই, এই সহজ শিক্ষাটুকুও পাঁচ বছরে বুঝে উঠতে পারেননি। বিদেশে গেলেই তাঁর ভাষণে কী বলবেন, মোটামুটি জানা। তিনি আসার আগে কোনও কাজই হত না। তিনি এসেই দেশকে উন্নতির চরম শিখরে নিয়ে গেছেন। দেশের বাকি সবাই চোর, কেউ কিচ্ছু কাজ করেননি, একমাত্র তিনিই একাই যুগাবতার হয়ে পৃথিবীতে নেমে এসেছেন। এমন নির্লজ্জ আত্মবিজ্ঞাপন এর আগে কেউ করেননি।
তালিকাটা চাইলে আরও বাড়ানোই যায়। সহজ কথা, এই পাঁচ বছরে অনেক কিছুই শেখেননি। তাই রাষ্ট্রনায়ক হয়ে উঠতে পারেননি। ত্রুটি বিচ্যুতি থাকতেই পারে। কিন্তু গোড়াতেই যদি এত গলদ থেকে যায়, সদিচ্ছাতেই যদি এত ফাঁক থেকে যায়, তাহলে পাসমার্ক পাওয়াই মুশকিল।
সবথেকে বড় কথা, সংসদে বিদায়ী ভাষণে কী বলতে হয়, সেটাই শিখে উঠতে পারেননি।