রক্তিম মিত্র
সিবিআই শুনলেই কেউ কেউ খুব উল্লসিত হয়ে পড়েন। ভাবেন, এবার বাছাধনরা জব্দ হবে। আশায় বাঁচে চাষা। এঁদেরও সেই অবস্থা। অতীত বারবার বুঝিয়েছে, এত উল্লসিত হওয়ার কিছু নেই। তবু এঁরা বুঝতেই চান না।
আচ্ছা, গত দু–তিন বছরে সিবিআই সম্পর্কে আমাদের অভিজ্ঞতা ঠিক কেমন? এটুকু বোঝা যায়, চাইলে তাঁরা অনেককিছুই পারেন। তাঁদের তদন্তের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন নেই। কিন্তু বিশ্বাসযোগ্যতা? এখানে সিবিআই–কে দশের মধ্যে কত দেবেন? যাঁরা সিবিআই–সিবিআই করে চিৎকার করছেন, ঠান্ডা মাথায় ভাবুন তো, চেষ্টা করেও কি দশের মধ্যে দুই বা তিনের বেশি দেওয়া যায়?
সারদা বা রোজভ্যালি মামলায় তাঁরা কী করলেন? কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করলেন। কয়েকবার জিজ্ঞাসাবাদ। ব্যাস, ওইটুকুই। একজনকে গ্রেপ্তার বা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় কেন? যেন তাঁর কাছ থেকে নতুন কোনও তথ্য বেরিয়ে আসে। কুণাল ঘোষ দিনের পর দিন দাবি করে গিয়েছেন, তাঁর জবানবন্দী নেওয়া হোক। যতদিন কুণাল জেলে ছিলেন, সেই জবানবন্দী নেওয়া হয়নি। মদন মিত্রকেই বা কবার জেরা করা হয়েছে?
সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বা তাপস পালকে যখন গ্রেপ্তার করা হল, পরের কয়েকদিন কতই না তৎপরতা। অজানা সব তথ্য বেরিয়ে আসছে। কিন্তু তারপরেই শীতঘুমে চলে গেল কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থাটি। ভোট পর্ব শেষ। আবার নাকি তেড়েফুঁড়ে নামবে সিবিআই। কী হবে? আবার দু একজন গ্রেপ্তার হবেন। হইচই হবে। কোনও এক অদৃশ্য কারণে আবার ভরা গ্রীষ্মে শীতঘুমে চলে যাবে সিবিআই নামক কুম্ভকর্ণ। প্রশ্ন হল, কেন ঘুমিয়ে যায় সিবিআই। যে কারণে লোকসভার এথিক্স কমিটি এখনও পর্যন্ত একটিও বৈঠক ডাকতে পারেনি, সেই কারণেই সিবিআই–ও ঘুমিয়ে যায়। আবার শাসক দলের বার্তা পেলে হঠাৎ জেগে ওঠে।
নারদ নিয়ে যাঁরা খুব খুশি খুশি বাইট দিচ্ছেন, তাঁদের এত উল্লসিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। এখানেও কয়েকদিন তোড়জোড় দেখবেন। তারপর আবার সব ঠান্ডা হয়ে যাবে। সিবিআইয়ের মতো এত দক্ষতা বা অভিজ্ঞতা কোনওটাই নেই। তবে এটুকু বুঝি, সদিচ্ছা থাকলে সাতদিনেই এই তদন্ত করা যায়। অন্তত আশিভাগ কাজ এগিয়ে আনা যায়। সাতদিনে না পারলে বুঝতে হবে সাত বছরেও হবে না। আদালত কি এই সহজ ব্যাপারগুলো বোঝে না? তাহলে শুধু তদন্তের নির্দেশ দিয়েই কেন দায়মুক্ত হয়? কেন সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয় না?
এরপর যে আইনজীবীরা সিবিআই তদন্ত দাবি করবেন, দয়া করে সময়সীমা বেঁধে দেওয়ার দাবিও তুলুন। এবং এই সমস্ত ক্ষেত্রে সেই সময়সীমা হোক সর্বোচ্চ এক মাস। যদি তার মধ্যে পর্যাপ্ত তদন্ত না হয়, দরকার হলে সিবিআইকে ভর্ৎসনা করা হোক। ঘুমিয়ে থাকা অফিসারদের সাসপেন্ড করা হোক।