বইমেলা কেন পিছিয়ে গেল, গিল্ডকর্তাদের বলার সাহস নেই

সরল বিশ্বাস

গত বছর থেকেই সবাই জানতেন, বইমেলার উদ্বোধন হবে ৩০ জানুয়ারি। গিল্ড কর্তারাও প্রেস কনফারেন্স করে সেই তারিখটাই ঘোষণা করেছিলেন। তারপর হঠাৎ সেটা পিছিয়ে ৩১ জানুয়ারি হয়ে গেল কেন?‌ শুধু তারিখ পেছনোর ঘোষণা করতে গিল্ডকে আলাদা করে প্রেস কনফারেন্স করতে হল। সেদিন (‌১০ জানুয়ারি)‌ গিল্ড কর্তারা ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন ১)‌ ব্রিগেড সমাবেশের আগে সেন্ট্রাল পার্কের মাঠে শাসকদেলর কর্মীদের থাকার ব্যবস্থা হবে। মাঠ পরিষ্কার করে শুরু করতে সময় লাগবে। ২)‌ যাঁরা আন্তর্জাতিক অতিথি, তাঁরা জানেন ৩১ তারিখে উদ্বোধন।

এই দুটি কারণই সেদিন দেখানো হয়েছিল। দুটোর কোনওটাই বিশ্বাসযোগ্য ছিল না। ১)‌ ব্রিগেডের সমাবেশ ১৯ জানুয়ারি। অর্থাৎ, তার পরেও ১১ দিন হাতে পাওয়া গেছে। তার মধ্যে মাঠ তৈরি করা যেত না?‌ যদি ১১ দিনের মাথায় না হয়, তাহলে ১২ দিনের মাথায় হয়ে যাবে, গিল্ড কর্তারা এতটা নিশ্চিত ছিলেন কী করে?‌ যুক্তিটা একেবারেই ধোপে টিকছে না।
২)‌ বিদেশি অতিথিরা নাকি জানতেন ৩১ তারিখ উদ্বোধন। এটা তো একেবারেই হাস্যকর যুক্তি। এক বছর আগে থেকেই ঠিক ছিল ৩০ তারিখ উদ্বোধন। যেমন এখনই বলে দেওয়া যায়, পরের বছর বইমেলার উদ্বোধন হবে ২৯ জানুয়ারি। কারণ, ২০২০ সালের জানুয়ারির শেষ বুধবার ২৯ জানুয়ারি। ২০২১ সালের বইমেলা শুরু হবে ২৭ জানুয়ারি। হ্যাঁ, প্রতি বছরই এই নিয়ম মেনেই বইমেলা হয়েছে।
ডিসেম্বর মাসেও ৩০ তারিখ উদ্বোধন জানিয়েই প্রেস কনফারেন্স করেছেন গিল্ড কর্তারা। তারপরেও বিদেশিরা যদি ৩১ তারিখ জানেন, তাহলে তার দায় ষোল আনাই গিল্ড কর্তাদের। গিল্ড কর্তারা এতবড় ভুল করেছেন?‌ মনে তো হয় না।
আর এটাই যদি কারণ হবে, তাহলে ব্রিগেডের পর মাঠ পরিষ্কার হবে না, এই যুক্তিটা একেবারেই দাঁড়াচ্ছে না।

book fair6

আসলে, এই দুটোর কোনওটাই কারণ নয়। আসল কারণটা বলার মতো বুকের পাটা (‌বা, ন্যূনতম সৎসাহস)‌ গিল্ড কর্তাদের নেই। যখন তারিখ বদলের ঘোষণা হয়েছিল, তখনই বোঝা গিয়েছিল ওই দিন নিশ্চিতভাবেই মুখ্যমন্ত্রী কলকাতায় থাকবেন না। তিনি থাকবেন না বলেই ওইদিন উদ্বোধন করা যাবে না(‌ এই মর্মে বেঙ্গল টাইমসে একটি প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছিল। চাইলে পড়ে নিতে পারেন)‌। সেটাই সত্যি হল। ৩০ তারিখ মুখ্যমন্ত্রী গিয়েছিলেন মামার বাড়িতে, একটি বিয়েবাড়ির অনুষ্ঠানে। সেইদিনই ছিল বীরভূম জেলার প্রশাসনিক বৈঠক।

মুখ্যমন্ত্রী মামা বাড়ি যেতেই পারেন। বিয়ে বাড়ির অনুষ্ঠানে যেতেই পারেন। এ নিয়ে সমালোচনা অবান্তর। কিন্তু তাঁর মামাবাড়ি যাওয়ার জন্য যদি বইমেলার উদ্বোধন পেছোতে হয়, সেটা বইমেলার পক্ষে মোটেই ভাল বিজ্ঞাপন নয়। মনে হতেই পারে কুৎসা। কিন্তু যেভাবে সবকিছু তাঁর মর্জিমাফিক চলছে, এই অনুমানটা কি সত্যিই অমূলক!‌ যিনি বইমেলার মঞ্চে দাঁড়িয়ে নিজের রোজগারের ফিরিস্তি শোনাতে পারেন। যিনি বইমেলার উদ্বোধন করতে এসে ওই মঞ্চেই নিজের বইয়ের উদ্বোধন করতে পারেন, তাঁর মর্জিতে অনেককিছুই হতে পারে। বইমেলা পিছোনো তো খুব সামান্য একটা ব্যাপার।

আবার বলছি, সরকার বলবে কুৎসা। গিল্ড কর্তারাও সহজ সত্যিটা স্বীকার করবেন না। সত্যি কথা স্বীকার করতে যে ন্যূনতম সৎসাহস লাগে তার কোনওটাই সরকারি আমলা বা গিল্ড কর্তাদের নেই। তাঁর মর্জিমাফিক রাজ্যটা চলছে। বইমেলাও যখন তাঁর ‘‌অনুপ্রেরণা’‌তেই হচ্ছে, তখন তাঁর মর্জিতেই উদ্বোধনের দিন পিছিয়ে যাবে, সেটা বুঝতে কোনও ফেলু মিত্তির বা ব্যোমকেশ বক্সী হওয়ার দরকার নেই।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.