বার্তা বলে কিছু হয় না, শক্তি প্রদর্শনই হল আসল কথা

শান্তনু দাম

মিডিয়ায় একটা চালু কথা আছে। মঞ্চ থেকে কী বার্তা দেওয়া হবে, সেদিকে তাকিয়ে আছেন জনতা। কথাটা যত শুনি, ততই কেমন বোকা বোকা মনে হবে। কোন সভায় কী নতুন বার্তা দেওয়া হয়েছে?‌ তাছাড়া, বার্তা দেওয়ার জন্য সভার দরকার কেন?‌ প্রেস কনফারেন্স করে বার্তা দেওয়া যায়। দলীয় নেতৃত্বের মাধ্যমে বার্তা দেওয়া যায়। সোশ্যাল সাইটে বার্তা দেওয়া যায়। কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়ে বার্তা দেওয়া যায়। তার জন্য আলাদা করে সভার দরকার হয় কেন?‌
ধরা যাক আমাদের মুখ্যমন্ত্রীর কথা। তিনি কোন সভায় কী বলবেন, মোটামুটি জানাই আছে। সরকারি সভায় বেশিরভাগ সময় জুড়ে দলের কথা বলে যাবেন। কী কী দিয়েছেন, তার ফিরিস্তি দিয়ে যাবেন। সবাই যেন তাঁর দানকে মনে রাখেন, এই মর্মে হুমকি দিয়ে যাবেন। প্রশাসনিক বৈঠকে বাকি সবাইকে হেয় করে যাবেন। বুঝিয়ে দেবেন, রাজ্যে একমাত্র তিনিই খুব সৎ, বাকিরা কেউ কাজের নয়। জনসভায় মাঝে মাঝে বলবেন, কাটমানি খাওয়া চলবে না। মানুষের সঙ্গে মিশতে হবে। অথচ, একের পর এক সন্ত্রাস আর অপকর্ম দেখেও নিশ্চুপ থাকবেন।

brigade3
থাক সেসব কথা। বার্তায় আসা যাক। ব্রিগেডে কী নতুন বার্তা দেওয়ার ছিল?‌ গত দু তিন বছর ধরে কয়েকশো বার যা যা বলেছেন, ব্রিগেডেও তাই বলেছেন। বিজেপি খুব খারাপ, তাদের সরাতে হবে। এর জন্য এত ঘটা করে সভার কী দরকার ছিল?‌ আসল কথা হল, নিজের দাবিটা জোরালোভাবে তুলে ধরলেন। বাকিদের দেখালেন, দেখো, আমি কেমন জমায়েত করতে পারি। আর বাংলার জনতাকে দেখালেন, দেখো, আমি কেমন সবাইকে ডেকে আনতে পারি, এক মঞ্চে সবাইকে হাজির করতে পারি।
এই মুহূর্তে লোকসভা ও রাজ্যসভা মিলিয়ে তাঁর ৪৭ জন এম পি। দুজন বহিষ্কৃতকে যদি তালিকার বাইরে রাখেন, তাহলে বকলমে অন্য দু–‌তিনজন জুনে যাবেন। যাঁর সঙ্গে এতজন এম পি, তাঁর বা সেই দলের একটা বাড়তি গুরুত্ব থাকবে, সেটাই স্বাভাবিক। এবারের নির্বাচনেও অন্তত তিরিশজন লোকসভার এম পি থাকতেই পারে। অর্থাৎ আঞ্চলিক দলগুলির মধ্যে তিনি সবথেকে এগিয়ে থাকলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। স্বাভাবিকভাবেই সবাই রেয়াত করবেন। এমনকী বিজেপি–‌ও। তাঁরাও ভাল করেই জানে, এই সংখ্যা তাঁদের নানা কাজে আসতে পারে। সেই কারণেই সারদা–‌নারদার তদন্ত বারো মাস প্রায় শীতঘুমেই থাকে।
সহজ কথা, সংখ্যা আছে, তাই গুরুত্ব আছে। সংখ্যা না থাকলে এই গুরুত্ব থাকত না। বার্তা–‌টার্তা কিছুই নয়। আসলে, ব্রিগেডের মঞ্চ ছিল শক্তি জাহিরের মঞ্চ। সব দলের ক্ষেত্রেই হয়ত এটাই প্রযোজ্য। নতুন বার্তা–‌টার্তা বলে কিছু হয় না। তাই মিডিয়া যখন নতুন বার্তা খোঁজে, মনে হয় তাঁরা সত্যিই এখনও নাবালক থেকে গেল।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.