রেলের আজগুবি নিয়ম, সুপার ফ্লপ হওয়া সময়ের অপেক্ষা

সরল বিশ্বাস
রেলকর্তাদের বাস্তব বোধবুদ্ধি সত্যিই লোপ পেয়েছে। নইলে, কেউ এমন সিদ্ধান্ত নেয়!‌ বলা হচ্ছে, ট্রেন ছাড়ার অন্তত কুড়ি মিনিট আগে স্টেশন পৌঁছতে হবে। যাত্রীদের আরও কড়া পরীক্ষা হবে। আপাতত দেশের ২০২ স্টেশনকে এই তালিকায় আনা হচ্ছে। পরে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনগুলিকেও নিরাপত্তার বেষ্টনিতে আনা হবে। আপাতত রেলের এই ২০২ স্টেশনের তালিকায় রয়েছে শিয়ালদা।
রেলকর্তাদের ব্যাখ্যা, বিমানবন্দরের মতোই নাকি যাত্রীদের ব্যাগ পরীক্ষা হবে। তাই একটু আগে যেতে হবে। আসলে, কর্তারা হয়ত ট্রেনে চড়া ভুলে গেছেন। নইলে বিমানের সঙ্গে এভাবে ট্রেনের তুলনা টানতে পারতেন না। একটা ট্রেনে কতজন যাত্রী যাতায়াত করেন, কোনও ধারনা আছে?‌ সকালের নামখানা বা ক্যানিং বা বনগাঁ থেকে যে ট্রেনগুলো আসছে বা বিকেলে ফিরে যাচ্ছে, সেগুলোর কথা না হয় ছেড়েই দিলাম। যেসব ট্রেনে রিজার্ভেশন ছাড়া লোকে চাপে না, যেসব ট্রেন মোটামুটি এলিট প্রজাতির, সেগুলিতেও যতসংখ্যক যাত্রী চাপেন, সেই সংখ্যাটা দু হাজারের কাছাকাছি। এত যাত্রীকে পরীক্ষা করা হবে, মাত্র কুড়ি মিনিটে!‌ ব্যাগ পরীক্ষা করতে হলে অন্তত দু’‌ঘণ্টা লাগার কথা।

train
তাছাড়া, এই পরীক্ষা কোথায় হবে?‌ এতগুলি প্ল্যাটফর্মে এত এত ট্রেন দাঁড়িয়ে থাকবে। এক্সপ্রেসের যাত্রী আর লোকালের যাত্রীর তফাত করবে কে?‌ সবাইকে যদি ব্যাগ খুলে দেখাতে হয়, এই ঝামেলা সামলানোর মতো পরিকাঠামো রেলের নেই। সেই পরিকাঠামো তৈরি করাও কার্যত অসম্ভব। অতিরিক্ত কড়াকড়ি করতে গিয়ে নিশ্চিতভাবেই অনেকে ট্রেন মিস করবেন। সেই বিক্ষোভ সামলাতে পারবেন তো?‌ তাঁরা যদি ক্ষতিপূরণ চেয়ে বসেন!‌ কত লোকের কত গুরুত্বপূর্ণ কাজ থাকে। রেলের এই তুঘলকি নিয়মে তাঁরা যদি ট্রেন মিস করেন, মামলা অনিবার্য। স্টেশনে স্টেশনে ভাঙচুর, রেলকর্মীদের হেনস্থা হলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই।
শেষমেষ লেজে গোবরে হয়ে এই নিয়ম ফিরিয়ে নেওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না। রেল যে নিয়ম চালু করতে চাইছে, সেটা সাতদিনও চালানো যাবে না। আসলে, যেসব লোকেরা এইসব আজগুবি নীতি নির্ধারণের সঙ্গে জড়িয়ে থাকেন, বাস্তবের সঙ্গে তাঁদের দূরত্ব অনেকটাই। সেই কারণেই একের পর এক পরিকল্পনা মুখ থুবড়ে পড়ে।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.