মিডিয়া সমাচার
সম্পাদক বদল হয়েছে দৈনিক যুগশঙ্খ–তে। সেইসঙ্গে একটু একটু করে বদলে যাচ্ছে সম্পাদকীয় নীতি। গেরুয়ার গন্ধ মুছে নীল সাদা হওয়ার মুখে। রাজ্যের মিডিয়ায় বিরোধী মতের যেটুকু পরিসর ছিল, তা আরও ফিকে হয়ে এল। আরও একটি তাঁবেদার মিডিয়ার সংখ্যা বাড়ল। মিডিয়া সমাচার বিভাগে লিখেছেন রাহুল বসু।
অনেকেই হয়ত একটা কাগজেই সীমাবদ্ধ থাকেন। আনন্দবাজার, বর্তমান বা এই সময়–এর গণ্ডিতেই আটকে থাকেন। বড়জোর আজকাল বা প্রতিদিন। বাম সমর্থকরা হয়ত চোখ রাখেন গণশক্তিতে। প্রবল তৃণমূলিরা হয়ত চোখ রাখেন খবর ৩৬৫ দিন–এ।
এর বাইরে আরও অনেক দৈনিক আছে। স্টলে থাকে। কিন্তু আমরা উল্টেও দেখি না। তেমনই একটি কাগজ দৈনিক যুগশঙ্খ। মূলত অসমের কাগজ। সেখানে বেশ জনপ্রিয়। কয়েক বছর ধরে কলকাতা থেকেও এডিশন বেরোচ্ছে। সম্প্রতি সম্পাদক পদে বদল এসেছে। নতুন সম্পাদক হিসেবে এসেছেন বাহারউদ্দিন।
সম্পাদক বদলের সঙ্গে সঙ্গে কাগজের সম্পাদকীয় নীতিও বদলে যাচ্ছে। যাঁরা মিডিয়া জগতের খোঁজ রাখেন, তাঁরা জানেন, গত কয়েক মাসে কাগজটি কিছুটা বিজেপি ঘেঁসা ছিল। তৃণমূলের বিভিন্ন সমালোচনা দেখা যেত এই কাগজে। মূলস্রোত কাগজের বড় অংশ যখন তাঁবেদারিকেই মূলমন্ত্র মেনে নিয়েছে, তার ভিড়ে অনেকটাই ব্যতিক্রম ছিল দৈনিক যুগশঙ্খ। এমন অনেক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, যা শাসকের কাছে বেশ অস্বস্তিকর। পরে সেই খবরগুলিরই ফলো আপ করেছে অন্যান্য বড় কাগজ। তখন হয়ত বিষয়টি সামনে এসেছে। ভুলে গেলে চলবে না, এমন অনেক এক্সক্লুসিভ খবরের আঁতুরঘর কিন্তু যুগশঙ্খ।
সেই কাগজ হঠাৎ নিজেদের লাইন বদলাতে গেল কেন? সূত্রের খবর, মালিকপক্ষ বুঝেছেন, শাসকদের বিরোধীতা করে বিশেষ লাভ হবে না। সরকারি বিজ্ঞাপন তো পাওয়া যাবেই না, উল্টে সরকারি চোখ রাঙানির ভয়ে বেসরকারি বিজ্ঞাপনও আসবে না। তাছাড়া, বিজেপি–র পক্ষেও আর্থিক আনুকূল্য দিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না। সূত্রের দাবি, নতুন সম্পাদক নাকি মালিকপক্ষকে বুঝিয়েছেন, তিনি সরকারি বিজ্ঞাপন এনে দেবেন। সেইসঙ্গে বিভিন্ন বড় বড় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনও আসবে। আগামী এক বছরের মধ্যে অন্য মূলস্রোত কাগজগুলির সঙ্গে পাল্লা দেবে যুগশঙ্খ।
তবে রাতারাতি একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে যাওয়া নয়। আপাতত দুদিকে খবরের একটা ভারসাম্য থাকছে। হঠাৎ করে বদলটা পাঠাকে চোখে লাগতে পারে। এটা ভেবেই ধীরে ধীরে বদলের পথে হাঁটছে সম্পাদকীয় নীতি। আরও একটি মিডিয়াকে নিজেদের অনুকূলে এনেই ফেলল শাসকদল। কাগজটা হয়ত স্বাস্থ্যবান হবে। বিরোধী মতের যে পরিসর ছিল, তা আরও ফিকে হয়ে এল। নিট ফল, আরও একটি তাঁবেদার মিডিয়ার সংখ্যা বাড়ল।
(মিডিয়া নানা জগতের খবর তুলে ধরে। কিন্তু সেই মিডিয়া জগতের খবর মানুষের অজানাই থেকে যায়। বেঙ্গল টাইমসের জনপ্রিয় বিভাগ মিডিয়া সমাচার। এখানে মিডিয়া জগতের অনেক অজানা কথা উঠে আসে। খবরের পাশাপাশি থাকে ব্যাখ্যা–বিশ্লেষণও।)