নন্দ ঘোষের কড়চা
সকাল থেকে এক অদ্ভুত আদিখ্যেতা শুরু হয়েছে। টিভি চ্যানেলগুলোকেও বলিহারি। কাজ নেই, অমনি ডান্ডা নিয়ে বেরিয়ে পড়ল। ভূমিকম্পের লাইভ কভারেজ। কেউ পৌঁছে গেল পাতাল রেলে, তো কেউ সেক্টর ফাইভে। আদিখ্যেতার শেষ নেই।
আপ লোকগুলোও তেমনি, সবাই ভীড় করে রাস্তায় নেমে গেল। যেন মেলা চলছে। একেকজনের হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে, যেন স্বপ্না বর্মনের মতো এশিয়ান গেমসে সোনা পেল। অফিস থেকে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমেছে। আর দাঁত কেলিয়ে টিভিতে বাইট দিয়ে চলেছে। যেন বিরাট বীরত্ব দেখিয়ে ফেলেছে।
দক্ষিণ কলকাতা চত্বরে একজন বলে উঠল, ‘ভাগ্যিস দিনের বেলা ভূমিকম্প হয়েছে। রাতের বেলায় হলে কী করতাম? তখন তো বুঝতেই পারতাম না।’ আহা, রাতে হলে কী ক্ষতি হত? দিনে জেনেই বা কী এমন বীরত্ব দেখালি? সেই তো ঘর থেকে ছুটে রাস্তায় এলি। ঘর তো অক্ষতই রইল। যদি রাতে হত, ঘুমিয়ে থাকতিস, কখন ধরণী কেঁপে উঠল, বুঝতে পারতিস না। সেটাই তো ভাল ছিল।
এই আহাম্মকগুলো বুঝতেই চায় না, তেমন জোরালো ভূমিকম্প হলেও রাস্তায় বেরোনোর সুযোগই পাওয়া যেত না। ঘরের ছিটকিনি খোলার অনেক আগেই হুড়মুড়িয়ে সব ভেঙে পড়ত। সিঁড়ি বা লিফট খোঁজার ফুরসত পাওয়া যেত না। আর রাস্তায় নেমে এলেই কি নিস্তার ছিল? দুপাশের বাড়িগুলো হুড়মুড়িয়ে পড়ত।
হালকা ভূমিকম্প। বাড়িগুলো পড়েনি। তাই রাস্তায় বেরিয়ে বীরত্ব। যেন উসাইন বোল্টের মতো অলিম্পিকে সোনা জিতেছে। সত্যিই, ভূমিকম্প নিয়ে এমন আদিখ্যেতা বাঙালিই দেখাতে পারে।