মাথা নুইয়ে রাখাটাই যখন রাজ্যের দস্তুর, তখন ওঁরা মাথা উঁচু রেখে লড়াই করার সাহস পেলেন কোথায়? ওঁদের প্রেরণা ওঁরা নিজেরাই। কোনও হোর্ডিং থেকে ওঁদের অনুপ্রেরণা ধার নিতে হয়নি। লিখেছেন সরল বিশ্বাস।।
ছাত্রদের দাবি কী ছিল? মূল দাবি, এই হোস্টেলে থাকা যায় না। একটু ভদ্রস্থ থাকার জায়গা চাই। খুব কি অন্যায় দাবি? যাঁরা কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে পড়ছেন, তাঁরা এটুকু দাবি করতে পারেন না ? গত কয়েকদিনে গণমাধ্যমের ক্যামেরাতেই দেখা গেছে, কতটা কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে তাঁদের পড়াশোনা করতে হচ্ছে।
তাঁরা বারবার নিজেদের সমস্যার কথা জানিয়েছেন। কিন্তু সরকারের টনক নড়েনি। বারবার এই দাবিকে উপেক্ষাই করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, যাদবপুরের মতোই এই আন্দোলনকেও ভাঙতে চেয়েছে সরকার। সহজ একটা বিষয়কে অকারণ জটিল করে তোলা হল শুধুমাত্র কয়েকজনের গোঁয়ার্তুমির জন্য।
প্রথম বর্ষের ছাত্রদের আলাদা করে দেওয়া হল। গোটা রাজ্যকে গিলে ফেললেও এখনও মেডিক্যাল কলেজে তৃণমূলের ইউনিট খোলা যায়নি। কারণ, এই মেধাবী ছাত্ররা এত বোকা নয়। একটা সামান্য গাজর ঝুলিয়ে দিয়ে এঁদের আনুগত্য কেনা যায় না। চারপাশের পরিস্থিতি কেমন, এই ছাত্ররা বেশ ভালই জানেন। তাঁদের মিছিলে হাঁটানো মুশকিল।
অতএব, তাঁদের আলাদা করো। যেন সিনিয়রদের সঙ্গে মিশতে না পারে। সেইসঙ্গে সেই হোস্টেলে এমন একজনকে সুপার করো, যে মগজ ধোলাই করতে পারবে। নানা প্রলোভন দিয়ে যদি কয়েকটা মাথাও চিবোনো যায়, তাহলে পা রাখার একটা জায়গা পাওয়া যাবে। আর একবার পা রাখার জায়গা পেয়ে গেলে, তারপর না হয় ‘উন্নয়ন’ দাঁড় করিয়ে দেওয়া যাবে।
হ্যাঁ, এটাই ছিল উদ্দেশ্য। সমস্যায় পড়লে ওরা অনশন করে কেন? এলাকার দাদাদের জানালেই পারে। প্রিন্সিপাল কী করবেন? তার থেকে মাজিবাবুর ক্ষমতা ঢের বেশি। তাঁর একটা ফোনেই কত ওলট–পালট হয়ে যায়! হোস্টেল আবার কোনও সমস্যা হল নাকি!
কিন্তু কী আর করা যাবে! এই ছাত্ররা মাজিবাবুর দ্বারস্থ হবে না। এঁরা অনশন করবে। ভাবা হয়েছিল, দু একদিন পরেই হয়ত অনশন তুলে নেবে। কিন্তু একদিন–দুদিন করতে করতে তেরদিন পেরিয়ে গেল। এরা তো মস্ত বেয়াড়া! গোটা রাজ্য যখন উন্নয়নের কর্মযজ্ঞে ভাসছে, তখন এরা এমন বেয়াদপি করে কেন? এরা কিছুতেই ‘নির্মল করো, মঙ্গল করো’ গাইতে চাইছে না।
নানা টোপ, নানা প্রলোভন কি আসেনি! নিশ্চিতভাবেই এসেছে। কিন্তু আশার কথা, এঁরা বিকিয়ে যাননি। এই কঠিন সময়েও মেরুদণ্ড সোজা রাখার এই জোর ওঁরা পেলেন কোথায়? ওঁদের অনুপ্রেরণা ওঁরা নিজেরাই। কোনও হোর্ডিং থেকে ওঁদের ‘অনুপ্রেরণা’ নিতে হয়নি।