‌লেনিনের দেশে ফুটবলের ফরাসি বিপ্লব

সায়ন ঘোষ

২০১৬ ইউরোকাপের ফাইনাল। মুখোমুখি ফ্রান্স ও পর্তুগাল। জার্মানিকে সেমিফাইনালে হারানোর পর পর্তুগালকে কার্যত ফাইনালে গুরুত্ব‌ই দিতে চায়নি ফরাসিরা। অনামী পর্তুগিজ ফুটবলার এডারের একটা গোল‌ই তাদের ইউরো জয়ের স্বপ্ন শেষ করে দিয়েছিল। সেই হারের অভিশাপ দু’‌বছর ধরে বয়ে বেড়াচ্ছিলেন পোগবা, লরিস, গ্রিজম্যানরা। আজ যেন তার‌ই শাপমুক্তি ঘটল রাশিয়াতে।

france2
ক্রোয়েশিয়াকে ৪-২ গোলে হারিয়ে দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপ জিতল ফ্রান্স। ম্যাচের স্কোর দেখে সবাই ভাবছেন একতরফা খেলা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে ১৯৯০ সালের পর এরকম উত্তেজক ফাইনাল আর দেখা যায়নি। দুর্দান্ত লড়েছে ক্রোয়েশিয়া। শুরু থেকেই আক্রমনের ঝড় তুলেছে তারা। লুকা মডরিচের নেতৃত্বে মাঝমাঠে র‍্যাকিটিচ, পেরিসিচরা ফুল ফোটাতে থাকেন। কিন্তু ম্যাচের ১৮ মিনিটে খেলার গতির বিপক্ষে গোল করে ফ্রান্স। বক্সের বাইরে থেকে গ্রিজম্যানের নেওয়া ফ্রি–‌ কিক মান্ডুকিচের মাথায় লেগে আত্মঘাতী গোল হয়ে যায় (১-০)। দশ মিনিটের মধ্য গোল শোধ করে ক্রোয়েশিয়া। ২৮ মিনিটে ভিদার পাশ থেকে কোনাকুনি শটে লরিসকে হার মানান পেরিসিচ (১-১)। এরপর আক্রমনের চাপ বাড়ালেও ক্রোয়েশিয়া যোগ্য স্ট্রাইকারের অভাবে গোল করতে ব্যর্থ হয়। ৩৮ মিনিটে পেরিসিচ বক্সে হ্যান্ডবল করলে পেনাল্টি পায় ফ্রান্স। পেনাল্টি থেকে সুভাসিচকে হার মানান গ্রিজম্যান (২-১)। প্রথমার্ধে একগোলে পিছিয়ে থাকলেও আক্রমনাত্মক খেলেছে ক্রোয়েশিয়া। দ্বিতিয়ার্ধে খোলস ছেড়ে বেরোতে থাকে ফ্রান্স। এমবাপের গতির কাছে বারবার পরাস্ত হন ক্রোট ডিফেন্ডার দেজান লভরেন। মাঝমাঠে পোগবা ও কান্তে র‍্যাকিটিচ, পেরিসিচদের আটকাতে সচেস্ট হন। কিন্তু ক্রোট অধিনায়ক মডরিচ শেষপর্যন্ত লড়ে গেছেন। ৪৭ ও ৪৮ মিনিটে দুটি নিশ্চিত গোল রক্ষা করেন ফরাসি অধিনায়ক লরিস। ৫১ মিনিটে এমবাপের কাছ থেকে একটি গোল বাচান সুভাসিচ। ৫৯ মিনিটে ফের ফ্রান্সকে এগিয়ে দেন পল পোগবা। ছিটকে আসা বল থেকে ঠান্ডা মাথায় গোল করে যান তিনি (৩-১)। ৬৫ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে মাপা শটে গোল করে যান এমবাপে (৪-১)। কিন্তু হার মানতে রাজি ছিলেন না ক্রোটরা। তাই ৬৯ মিনিটে লরিসের অমার্জনীয় ভুল থেকে গোল করে যান মান্ডুকিচ। লরিসের কাছ থেকে ছিটকে আসা বলে টোকা মেরে গোলটি করেন তিনি(৪-২)। এই গোলটিই লরিসের গোল্ডেন গ্লাভসের পথে বাধা দাঁড়ায়। বাকি সময়টা ক্রোটরা লড়ে গেলেও মান্ডুকিচের পাশে যোগ্য স্ট্রাইকারের অভাবে গোল পরিশোধ করতে পারেনি। এর আগে তিনটি ম্যাচ‌ই অতিরিক্ত সময়ে জিতেছিল ক্রোয়েশিয়া। তাই এদিন কিছুটা ক্লান্তি গ্রাস করে তাদের। তাই দ্বিতীয়ার্ধে এমবাপে, পোগবা, জিরুদের গতির কাছে হারলো ক্রোটরা। অনেকেই চাইছিলেন, নতুন চ্যাম্পিয়ন উঠে আসুক। সে আশা আর হল না। ২০০৬ এর অভিশাপ কাটিয়ে আবার বিশ্বসেরা ফ্রান্স।

france

এই জয়ের সুবাদে ফরাসি কোচ দিদিয়ের দেশ মারিও জাগালো ও বেকেনবাউয়ার সঙ্গে এক আসনে জায়গা করে নিলেন। এর আগে জাগালো ও বেকেনবাউয়ার খেলোয়াড় এবং কোচ হিসাবে বিশ্বকাপ জিতেছেন‌। এবার তাঁদের সঙ্গে যুক্ত হলেন দেঁশ। তিনি এর আগে ১৯৯৮ এ প্রথম বিশ্বকাপ জয়ী ফরাসি দলের অধিনায়ক ছিলেন। এবার তিনি দ্বিতীয় বিশ্বকাপ জয়ী ফরাসী দলের কোচ ছিলেন। তবে এদিন ফাইনাল খেলায় কয়েকজন দর্শক খেলা চলাকালীন মাঠে ঢুকে পড়ে যা বিশ্বকাপ ফাইনাল আসরে কাম্য নয়।

এবারের বিশ্বকাপের পরিসংখ্যান
সোনার বুট- হ্যারি কেন (ইংল্যান্ড)
সোনার বল- লুকা মডরিচ (ক্রোয়েশিয়া)
সোনার গ্লাভস- থিবাউট কুর্তোয়া (বেলজিয়াম)
সেরা তরুণ ফুটবলার- কিলিয়ান এমবাপে (ফ্রান্স)

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.