শিব, বিষ্ণু, কৃষ্ণ, কৃত্তিবাস- সবাই হিন্দুধর্ম বিরোধী

ময়ূখ নস্কর

সুব্রহ্মণ্যম স্বামী বলেছেন, “সমকামিতা হিন্দুধর্ম বিরোধী। এই রোগ সারানোর উদ্দেশ্যে চিকিৎসা বিষয়ে বেশি করে গবেষণা করা উচিত।” ঠিকই বলেছেন। একে সু, তায় ব্রহ্মণ্য, তায় স্বামী, সর্বোপরি বিজেপি নেতা, সুতরাং তিনি বিদ্বান হতে বাধ্য। সমকামিতা সম্বন্ধে সুব্রহ্মণ্যম স্বামী নিশ্চয়ই অনেক কিছু জানেন, হিন্দু ধর্ম সম্বন্ধেও তিনি নিশ্চয়ই অনেক কিছু জানেন, সব কিছু জেনেই নিশ্চয়ই মন্তব্য করেছেন।

আমি সমকামিতা বা হিন্দুধর্ম, কোনও কিছুরই কোনও কিছু জানি না। এর মধ্যে কোনটা ভালো, কোনটা খারাপ, কে কার বিরোধী, তাও জানি না। তবে সমকামিতা শব্দটা শুনে LGBT অর্থাৎ lesbian, gay, bisexual, transgender
বলে একটা কথা মনে পড়ল, আর আদ্যিকালে পড়া কিছু কথা মনে পড়ল। সে সব কথা হতে পারে, ভুল হতে পারে। আপনারা একটু বই খুলে, নেট খুলে মিলিয়ে নেবেন।

প্রথমেই Lesbian অর্থাৎ নারী সমকামী, — কৃত্তিবাসের রামায়নে একটা আখ্যান আছে। এক রাজার দুই রানি। রাজা অপুত্রক অবস্থায় মারা গেলেন। এবার বংশরক্ষা হবে কী করে? শিব এসে দুই রানিকে বর দিলেন, “দুই জনে কর রতি। মোর বরে একের হইবে সন্ততি।” এই মিলনের ফলে ভগীরথের জন্ম হয়। নারীর সঙ্গে নারীর মিলনে সন্তান হয় কিনা জানি না। হয়তো সে যুগে হত। কিন্তু নারীর সঙ্গে নারীর মিলনও হত।

এবার Gay অর্থাৎ পুরুষ সমকামী—দেবতাদের মধ্যে অমৃত পরিবেশন করার জন্য বিষ্ণু মোহিনীরূপ ধারণ করেছিলেন। তাঁর সেই রূপ দেখে শিব ঠাকুর অ্যায়সা টগবগিয়ে উঠলেন যে মোহিনির সাথে সঙ্গম না করে থামলেন না। ত্রিকালজ্ঞ শিব নিশ্চয়ই জানতেন মোহিনী আসলে পুরুষ? শিব নিজেও পুরুষ। তাহলে পুরুষে পুরুষে মিলন হত। প্রসঙ্গত কেরালার মাত্তানচেরি প্রাসাদের দেওয়ালে এই মিলন এবং তাই দেখে পার্বতীর রাগের ছবি আঁকা আছে।

mural

এবার Bisexual অর্থাৎ উভকামী — স্বামী-বাবু তামিলনাড়ুর লোক। সেই রাজ্যে মহাভারতের একটি কাহিনী চালু আছে। মহাভারতের যুদ্ধের আগে পাণ্ডবপক্ষ আরাবানকে বলি দেবার সিদ্ধান্ত নিল। এতে পাণ্ডবদের জয় নিশ্চিত হবে। আরাবানও ধর্মরক্ষার জন্য প্রাণবিসর্জন দিতে রাজি হলেন। কিন্তু তিনি তখনও অবিবাহিত, তাই দাবি জানালেন, বিয়ে করে তবেই প্রাণবিসর্জন দেবেন। কিন্তু যার মৃত্যু আসন্ন তাকে বিয়ে করতে কোনও মেয়েই রাজি হল না। তখন এগিয়ে এলেন কৃষ্ণ। তিনি মোহিনী রূপ ধারণ করে আরাবানকে বিবাহ করলেন। আরাবানের মৃত্যুর পর বিধবার পোশাক পরে কান্নাকাটিও করলেন। এই যে এক জন ব্যক্তি, একবার রুক্মিণী, সত্যভামাকে বিয়ে করছেন, আবার আরাবানকে বিয়ে করছেন একেই তো বলে উভকামিতা।

এবার Transgender অর্থাৎ রূপান্তরকামী —বিষ্ণু তথা কৃষ্ণ যে প্রায়ই পুরুষ থেকে নারী হতেন আবার পুরুষ থেকে পুরুষ হতেন সে তো দেখলাম। কৃষ্ণের বন্ধু অর্জুনও এক বছর নারী সেজে কাটিয়েছিলেন। বোকালোকেরা একে transgender-এর উদাহরণ বলে মনে করে। কিন্তু বিদ্বানরা তা মানে না। কিন্তু রামায়নে ইল রাজার গল্পটা transgender-এর আদর্শ উদাহরণ। তিনি শাপগ্রস্ত হয়ে কিছুদিন পুরুষ কিছুদিন নারী এই ভাবে কাটাতেন। নারী অবস্থায় তাঁর নাম হত ইলা। তিনি পুরুষ হয়ে সন্তানের জন্ম দিতেন আবার, নারী হয়ে সন্তান গর্ভে ধারণ করতেন।

এত কিছু কথা বলার পরেও আমার দুইখান কথা আছে। প্রথম কথা, এসব ঘটনা কি সত্যিই ঘটত? অবশ্যই ঘটত। কারণ ধর্মগ্রন্থে বিশেষ করে হিন্দু ধর্ম গ্রন্থে কখনও মিথ্যা লিখতে পারে না। দ্বিতীয় কথা, শিব, বিষ্ণু, কৃষ্ণ, কৃত্তিবাস এঁরা যা করেছেন, যা লিখেছেন সেটা ঠিক না সুব্রহ্মণ্যম স্বামী ঠিক? অবশ্যই সুব্রহ্মণ্যম স্বামী ঠিক।
কারণ তিনি বিজেপি নেতা। তিনি ভুল বলতেই পারেন না। শিব, বিষ্ণু, কৃষ্ণ, কৃত্তিবাস এঁরা সবাই হিন্দুধর্ম বিরোধী।

চিকিৎসা করে এঁদের রোগ সারাতে হবে।

পুনশ্চঃ ব্যাদে তো সব কিছুই আছে। কাটা মাথার প্লাস্টিক সার্জারি, বিনা তেলে উড়োজাহাজ, escape velocity না জেনে স্যাটেলাইট, বিনা বিদ্যুতে টেলিভিশন। তাহলে সমকামিতার ওষুধ ছিল না কেন? থাকলে শিব আর বিষ্ণুর রোগ সেরে যেত।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.