রক্তিম মিত্র
প্রথমে মুখ্যমন্ত্রী হুঙ্কার দিলেন। সেই হুঙ্কারে তেমন কাজ হল না। কলেজে কলেজে ভর্তির নামে দিব্যি চলছে তোলাবাজি। এবার মুখ্যমন্ত্রী নিজেই ছুটলেন পাড়ার কলেজে। শিক্ষামন্ত্রী ছুটলেন অন্য তিন কলেজে।
প্রশ্ন হল, মুখ্যমন্ত্রীকে, শিক্ষামন্ত্রীকে এভাবে কলেজে কলেজে ছুটতে হচ্ছে কেন? কারণ, সমস্যাগুলোকে তাঁরাই বাড়তে দিয়েছেন। এতটাই বেড়ে গেছে, এখন তাঁদের আর কোনও নিয়ন্ত্রণই থাকছে না। কেউ কারও কথাই শুনছে না। পার্টির নেতাদের কথা বা পুলিশের কথা শুনতে ছাত্রনেতাদের বয়েই গেছে। তারা এমন দেখছে, তেমন শিখছে।
তোলাবাজি আর সিন্ডিকেট ভয়ঙ্কর জায়গায় পৌঁছে গেছে। যে কোনও কাজেই চমকানি, ধমকানি আছেই। ফুটপাথে দোকান করা থেকে শুরু করে রিক্সা চালানো, কোনও পেশাই আজ নিরাপদ নয়। কখনও পুলিশ এসে তুলে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে। কখনও পাড়ার দাদারা তোলা চাইছে। এমন দৃশ্য দেখেই বড় হচ্ছে পড়ুয়ারা। একটু বড় হতে না হতেই তারাও ‘অনুপ্রেরণা’ পেয়ে যাচ্ছে। তারা চোখের সামনে দেখছে, যারা যত বেশি চমকানির রাস্তায় হাঁটছে, তাদের তত বেশি করে পদোন্নতি ঘটছে। পুলিশ তাদের ঘাটায় না, বরং বেশ সমীহ করে। দলের সর্বোচ্চ নেতা–মন্ত্রীরা তাদের আড়াল করে। তাদের হয়ে যুক্তি সাজাতে বুদ্ধিজীবীরাও টিভিতে, কাগজে হাজির হয়ে যায়। তারা কথায় কথায় বলে, আগেও এসব হত। যা ঘটছে, তা বিক্ষিপ্ত ঘটনা। চোখের সামনে তারা দেখল, পঞ্চায়েত ভোটকে ঘিরে গুন্ডামি কোন পর্যায়ে পৌঁছল। তারা দেখল, প্রশাসন কেমন নতজানু হয়ে রইল। কয়লা খাদান, গরু পাচার, বালি খাদানের বখরা ঘুরপথে আসলে কোথায় যায়, সেটাও ওদের অজানা নয়।
এসব দেখেও তারা কতক্ষণ আর সুবোধ বালক হয়ে থাকবে? অন্যান্য ক্ষেত্রে তোলা তোলার জন্য সারা বছর পড়ে থাকে। কিন্তু ভর্তির ক্ষেত্রে একবার যদি সময়টা পেরিয়ে যায়, আর সুযোগ আসবে না। তাই ওরা সুযোগের সদ্ব্যবহার করছে। কে কী বলল, ওদের ভাবতে বয়েই গেছে। দলের বদনাম হল কিনা, এসব ভাবতেও ওদের বয়েই গেছে। ওরা জানে, এত বড় বড় কান্ডে যখন দলের বদনাম হয়নি, এই ছোট ছোট ঘটনায় নতুন করে কিছুই হওয়ার নেই। তারা জানে, শিক্ষামন্ত্রী বলবেন, প্রশাসন কঠোরভাবে ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু তারা এটাও জানে, এই হুমকি দেওয়া লোকটা আসলে কতটা অসহায়। এমন হুমকি গত পাঁচ বছরে পাঁচশোবার দিয়েছেন। কিন্তু কিছুই করতে পারেননি।
রোগ বাড়তে বাড়তে মহামারির চেহারা নিয়েছে। তাই হুঙ্কার দিয়েও কাজ হবে না। কলেজে কলেজে গিয়েও কাজ হবে না। যে চারাগাছে একটু একটু করে জল দেওয়া হয়েছে, তার শিকড় নিজের অজান্তেই অনেক দূর ছড়িয়ে গেছে। এখন চাইলেও উপড়ে ফেলা মুশকিল।