সঞ্জীব রায়
ছোটবেলায় সবাই একটু আধটু ফুটবল খেলে, আমিও খেলেছি। তবে ওই পাড়া পর্যন্তই। তাই বলে আমি কি ফুটবলকে ভালবাসতে পারি না? আমি কি আমার প্রিয় দলের জয়ে আনন্দ পেতে পারি না? প্রিয় দল হেরে গেলে কষ্ট পেতে পারি না? আমার প্রিয় দল আর্জেন্টিনা। অন্যদের মতো আমি বারবার ঘোড়া বদল করি না। সেই ছিয়াশি থেকে আর্জেন্টিনার ভক্ত হয়েছি। আজও সেই আনুগত্য বদল করিনি।
সত্যি কথা বলতে কী, ছিয়াশির আগে বিশ্ব ফুটবল দেখার তেমন সুযোগও ছিল না। ছিয়াশিতেও আমাদের বাড়িতে টিভি আসেনি। দেখতে হয়েছে অন্যের বাড়ি গিয়ে। কিন্তু একটা লোক একাই যেন আমার ভালবাসার পৃথিবীটাকে বদলে দিল। মনে হল, ভিন মহাদেশে থাকলেও এই মানুষটাকে ভালবাসা যায়। এই মানুষটা একাই সব প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করছে। পাশে তেমন কেউ নেই, তবু একাই লড়ে যাচ্ছে। পড়ছে, ধুলো ঝেড়ে আবার উঠে দাঁড়াচ্ছে। পাঁচজনকে–ছজনকে বোকা বানিয়ে পৌঁছে যাচ্ছে গোলের কাছাকাছি। কখনও নিজে গোল করছে, কখনও সতীর্থকে দিয়ে করাচ্ছে। এই মানুষটাই তো আমার স্বপ্নের মানুষ।
নব্বইয়ে এই লোকটা একাই ফাইনালে নিয়ে চলে গেল। হেরে যাওয়ার পর তার সঙ্গে আমরাও কি কাঁদিনি? চুরানব্বই বিশ্বকাপের সেই মর্মান্তিক দিনটা কী করে ভুলব? আমার প্রিয় মারাদোনা নির্বাসিত? সে আর ফুটবল খেলতে পারবে না? মেনে নিতে পারিনি। তারপর থেকে মারাদোনা না থাকলেও ওই দেশটা আমার কাছে বড় প্রিয় হয়ে উঠল। কখনও বাতিস্তুতা, কখনও রিকলমে, কখনও আইমারদের হয়ে চিৎকার করেছি। তারপর এল যথার্থ উত্তরসূরী— মেসি।
দশে বিরাট কিছু ঘটেনি। চোদ্দয় ফাইনালে উঠেও শেষমুহূর্তে হার। মেসির সামনে এই শেষ সুযোগ। পরের বিশ্বকাপে মেসির বয়স আরও চার বছর বেড়ে যাবে। নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, তখন মেসিকে সেরা ফর্মে পাওয়া যাবে না। আর সেক্ষেত্রে মেসি খেলবে বলেও মনে হয় না। যা করার, এবারই করতে হবে। আর্জেন্টিনা আদৌ দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠে আসবে কিনা, তা নিয়েও কত সংশয় ছিল। শেষ ম্যাচে টানটান উত্তেজনা। জিতলেও পরের রাউন্ডে যাওয়ার নিশ্চয়তা নেই। তাকিয়ে থাকতে হবে অন্য ম্যাচের দিকে। শেষ বাঁশি বাজতে যেন ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ল। আসল সময়ে আসল কাজটা ঠিক করে দেখাল আমার মেসি।
ক্রোয়েশিয়া ৯ পয়েন্ট নিয়ে উঠেছে। আর্জেন্টিনা উঠেছে চার পয়েন্ট নিয়ে। তাতে কী? আবার সবাইকে শুরু করতে হবে একেবারে শূন্য থেকে। একেবারেই শূন্য থেকে শুরু করুর আর্জেন্টিনা। প্রতিটি ম্যাচই শুরুর ম্যাচ, প্রতিটি ম্যাচই শেষ ম্যাচ। সামনে ফ্রান্স। বিশেষজ্ঞরা বলবেন, কে কোনদিকে এগিয়ে। তুল্যমূল্য বিচারে হয়ত আর্জেন্টিনা পিছিয়েই থাকবে। থাকুক। কিন্তু স্কোরলাইনই শেষ কথা বলবে। তাই তাকিয়ে থাকব মেসির দিকে। সব হিসেব উল্টে দেওয়াই তো তার কাজ। রাঙিয়ে দিয়ে যাও। বিদায়বেলায় যেন হাতে বিশ্বকাপ দেখতে পাই।
(বিশ্বকাপ মানে কি শুধু ব্রাজিল–আর্জেন্টিনার? আপনার নয়? আপনার জীবনের সঙ্গেও তো কোথাও না কোথাও জড়িয়ে আছে বিশ্বকাপ। সেই স্মৃতি, সেই নস্টালজিয়া, সেই ভাল লাগা উঠে আসুক আপনার বয়ানে। পাঠিয়ে দিন বেঙ্গল টাইমসের ঠিকানায়। )