‌বঙ্কিম নিয়ে অমিত শাহ–‌র এত দরদ!‌

ময়ূখ নস্কর

যে ঘটনা একবার ঘটে তাকে দুর্ঘটনা বলে। কিন্তু যে ঘটনা বারবার ঘটে তা দুর্ঘটনা নয়, সেটাই স্বাভাবিক। রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে বিজেপির মূল্যায়নে এই স্বাভাবিকতাই ফুটে ওঠে।

বেশ কয়েকবছর আগে তথাগত রায়, তিনি তখনও ত্রিপুরার রাজ্যপাল হননি, বলেছিলেন, বাংলাকে রসুন সংস্কৃতি থেকে মুক্ত করতে হবে। র-সু-ন অর্থাৎ রবীন্দ্র, সুকান্ত, নজরুল। তখন ভাবা গেছিল, এটা স্লিপ অফ টাং। কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনাবলীতে বোঝা যাচ্ছে, স্লিপ নয় এটাই বিজেপির মন কি বাত।

অসমে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় এসেই ২৫ বৈশাখের ছুটি বাতিল করেছে। আর এস এস-এর তাত্ত্বিক নেতা বলেছেন, আজকের ভারতে রবীন্দ্রনাথ আর প্রাসঙ্গিক নয়। তার রচনা পাঠ্যসূচি থেকে বাদ দিতে হবে। রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে বিজেপির ধারণা কেমন তা বোঝা গেছিল, যখন স্বয়ং মোদী মন কি বাতে ভোরবেলা রেডিওতে রবীন্দ্রসঙ্গীত শোনার কথা উল্লেখ করেছিলেন। মজার কথা ভোরের ওই সময়ে আদৌ রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্প্রচার হত না।

এবার ১৬ কলা পূর্ণ হল। বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ বাংলায় এসে, দেশভাগের জন্য ঘুরিয়ে রবীন্দ্রনাথকে দায়ী করলেন। তিনি বললেন, বন্দেমাতরম গানটিকে ভাগ করার জন্যই নাকি দেশভাগ হয়েছে। মহাপণ্ডিত অমিত শাহ জানেন না, কবিতার নির্বাচিত অংশ বেছে নিয়ে তাতে সুর দিয়েই গান হয়। রবীন্দ্রনাথের অসংখ্য গানে ক্ষেত্রে একথা প্রযোজ্য। এমনকি জনগণমন গানটিও আসলে অনেক বড়। তার নির্বাচিত অংশ বেছে নিয়ে জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে গাওয়া হয়। জনগণমন গানটিকে যেমন ছোট করে গাওয়া হয়, বন্দেমাতরম গানটিকেও ছোট করে গাওয়া হয়। এতে আশ্চর্যের কিছু নেই। যার ইচ্ছা তিনি পুরো গানটি গাইতে পারেন, তাতে কারও আপত্তি নেই।

amit shah4

কিন্তু অমিত শাহ তথা বিজেপির এই মানসিকতাকে যদি শুধু মুর্খামি বলে ভাবেন তাহলে ভুল ভাববেন। এর পিছনে আছে নিখাদ শয়তানি তথা রবীন্দ্র-বিরোধী মানসিকতা। বন্দেমাতরম গানটির কতটুকু অংশ জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে গাওয়া হবে তা যারা ঠিক করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম রবীন্দ্রনাথ। বিজেপি বলছে, এই গান ভাগ হওয়ার জন্য দেশভাগ হয়েছে। অর্থাৎ রবীন্দ্রনাথ দেশ ভাগের জন্য দায়ী।

যদি ভাবেন, বিজেপি বঙ্কিমকে ভালোবেসে বন্দেমাতরম বলছে তাহলে ভুল ভাববেন। তাঁদের বঙ্কিম প্রেমের মূলে আছে তীব্র সাম্প্রদায়িক মনোভাব। আনন্দমঠ একটি ব্রিটিশ বিরোধী উপন্যাস যা অসংখ্য স্বাধীনতা সংগ্রামীকে প্রেরণা দিয়েছিল। কিন্তু বিজেপি এটিকে মুসলিম বিরোধী উপন্যাস বলে মনে করে। আর এস এস যেমন ইংরেজের বিরুদ্ধে লড়াই না করে মুসলমানদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে চাইত, বঙ্কিমের লেখাকেও তারা সেই ছাঁচে ফেলতে চায়। অথচ, বঙ্কিম সম্পর্কেও কোনও পড়াশোনা নেই। আমি নিশ্চিত, বন্দেমাতরমের পুরো অংশ না নেওয়ায় যে অমিত শাহর এত আপত্তি, সেই অমিত শাহকে পুরোটা বলতে বলুন। নিশ্চিত থাকুন, পারবেন না। এমনকী যতটা আছে, ততটাও পারবেন কিনা সন্দেহ। হয়ত রাতারাতি মুখস্থ করতে বসবেন।

বঙ্কিম-রবীন্দ্রনাথ-বাঙালি কাউকেই তারা ভালবাসে না। বঙ্কিমের প্রতি যদি এতই ভালোবাসা, বন্দেমাতরমের প্রতি এত ভালোবাসা, তাহলে কোনও বিজেপি নেতাকে বলুন সর্বভারতীয়স্তরে হিন্দির পাশাপাশি বঙ্কিমের ভাষা বাংলাকেও ব্যবহার করতে হবে। দেখুন কেমন রাজি হয়?‌

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.