আজ রবিবাবু বুঝছেন, কাল অন্যরাও বুঝবেন

কৌশিক রায়

কোনও মন্ত্রী সেই জেলার সাংসদের বিরুদ্ধে এভাবে মুখ খুলেছেন!‌ গত সাত বছরে এমনটা হয়েছে বলে মনে পড়ছে না। অথচ, সেই খবরটা মিডিয়ায় সেভাবে জায়গাই পেল না। হয়ত উত্তরবঙ্গের খবর বলেই বিষয়টি উপেক্ষিত।

কোচবিহারের প্রবীণ মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। হাতে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তর। তার ওপর জেলা সভাপতি। তিনি কিনা আক্রান্ত হলেন নিজের দলের কর্মীদের হাতেই। দলীয় স্তরে ক্ষোভ বিক্ষোভ থাকতেই পারে। এটা নতুন কিছু নয়। কিন্তু তারপরই তিনি প্রকাশ্যে তোপ দাগলেন দলের সাংসদ পার্থপ্রতিম রায়ের বিরুদ্ধে। মন্ত্রীর হুঙ্কার, যার পঞ্চায়েত মেম্বার হওয়ার যোগ্যতা ছিল না, তাকে তুলে এনে এমপি বানালাম, আজ সে কিনা আমাকে হেনস্থা করছে?‌ এই এম পি যদি আবার টিকিট পায়, আমি দল ছেড়ে দেব।

ঘনিষ্ঠমহলে নয়, একেবারে ভিডিও বার্তায় তোপ দেগেছেন মন্ত্রী। শোরগোল পড়ে যাওয়ারই কথা। কিন্তু বাংলার মূলস্রোত চ্যানেলগুলি নীরব। কাগজগুলিও অদ্ভুত মৌনতা নিয়েছে। কলকাতা এডিশনে জায়গা হয়নি। কলকাতার কর্তারা হয়ত খবরের গুরুত্ব বোঝেননি। ‌

rabi ghosh

আসলে, এটা হওয়ারই ছিল। বলা যায়, এটা সূচনা। এমন ঘটনা নানা জায়গায় ঘটবে। এই রবীন্দ্রনাথ বাবুই নির্বাচনের সময় কী ভূমিকা পালন করেছেন, সেটা স্থানীয়দের অজানা নয়। মিডিয়াতেও কিছুটা উঠে এসেছে। বিরোধীদের প্রার্থী হতে না দেওয়া, জোর করে নাম তুলিয়ে নেওয়া, এমনকী অপহরণ। কোনওকিছুই বাকি ছিল না কোচবিহার জেলায়। শুধুমাত্র একটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ১৮ জনকে অপহরণ করা হয়েছিল। আর ভোটের দিন কী হয়েছিল, তাও জানা গেছে। কোথাও কোথাও সকাল হওয়ার আগেই ভোট শেষ। কোথাও বেলা দশটায় ভোট শেষ। একটা জেলা পরিষদ আসন, সেখানে মন্ত্রীমশাইয়ের ছেলে কিনা জিতছেন ৪০ হাজার ভোটে!‌ নেতাজি যদি ফিরে আসেন, কোনও একটি জেলা পরিষদ আসনে দাঁড়ান, তিনিও ৪০ হাজার ভোটে জিতবেন না। কিন্তু রবিবাবুর পুত্র জিতেছেন।

জেলায় যা যা কাণ্ড হয়েছে, তা রবিবাবুর নির্দেশ ছাড়াই হয়েছে!‌ ফিরে আসবেই। যে ফ্র‌্যাঙ্কেনস্টাইন তৈরি করবেন, তার মাশুল দিতেই হবে। যারা ছাপ্পা মারল, যারা অপহরণ করল, তারা হঠাৎ ভোটের পর নিরীহ হয়ে যাবে, এমন ভাবার কোনও কারণ নেই। তাদের চাহিদার এই তো সবে শুরু। কুয়ো, রাস্তা, কালভার্ট থেকে শুরু করে পঞ্চায়েতের নানা ভাগ বাটোয়ারা। কত সামাল দেবেন!‌ পল্টুকে খুশি করলে লাল্টুর গোঁসা হবে। লাল্টুকে বেশি দিলে পল্টুও ঘেরাও করবে।

বিনা লড়াইয়ে ভোটে জিতলে কী কী হয়, তার অজস্র নমুনা ছড়িয়ে আছে। চন্দননগর থেকে শুরু করে নানা জায়গায় কী হচ্ছে, খোঁজ নিন। এখনও তো বোর্ডগঠন প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। শুরু হতে দিন। নানা জায়গায় কোচবিহার মডেল তৈরি হবে। শুধু রবিবাবু নন, আরও অনেককেই হয়ত হেনস্থার শিকার হতে হবে।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.