সরল বিশ্বাস
হঠাৎ নিজের বাড়িতে প্রেস কনফারেন্স ডেকে বসলেন মন্ত্রী গৌতম দেব। বিষয়: কেন অশোক ভট্টাচার্য গিয়েছিলেন উচ্চ মাধ্যমিকে প্রথম হওয়া গ্রন্থন সেনগুপ্তর বাড়িতে? অশোক ভট্টাচার্য নাকি প্রচারের জন্য এমনটা করছেন। শিলিগুড়ি পুরনিগমের সচেতনতার প্রচারে কেন ব্যবহার করা হবে গ্রন্থনকে? ইত্যাদি ইত্যাদি।
এটা ঘটনা, রবিবার শিলিগুড়ির মেয়র অশোক ভট্টাচার্য অভিনন্দন জানাতে গিয়েছিলেন গ্রন্থনের বাড়িতে। বেশ কিছুক্ষণ ছিলেন। কিছু কথাবার্তা হয়। কাগজে তেমন লেখালেখি না হলেও সোশাল মিডিয়া মারফত কিছু ছবি ছড়িয়েছে।
ধরেই নিলাম, শিলিগুড়ির মেয়র রাজনীতি করতে গিয়েছেন। প্রচার পাওয়ার জন্যই গিয়েছেন।
কিন্তু ঘটনা হল, তার আগের দিন গৌতম দেবও সেই কৃতী ছাত্রের বাড়িতে গিয়েছিলেন। অনেক কাগজে ছবি আছে। মন্ত্রীমশাইও ছবির জন্য পোজ দিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। আগাম খবর না দেওয়া থাকলে হঠাৎ করে গ্রন্থনের বাড়িতে এত ক্যামেরাম্যানের ভিড় থাকারও কথা নয়। তারপরেও যারা যারা আসেনি, হোয়াটসঅ্যাপ মারফত ছবি পাঠানোর ব্যবস্থা তো রয়েইছে।
উত্তরবঙ্গ থেকে একজন রাজ্যের প্রথম হয়েছে। শিলিগুড়ির মন্ত্রী হিসেবে গৌতম দেব অভিনন্দন জানাতে যেতেই পারেন। ঠিক তেমনি শিলিগুড়ির মেয়র অশোক ভট্টাচার্যও যেতে পারেন। কই, অশোক ভট্টাচার্য তো প্রশ্ন তোলেননি, কেন গৌতম দেব গিয়েছিলেন? তাহলে, গৌতম দেবের এত গাত্রদাহ কেন?
গৌতম দেবও তাকে পরামর্শ দিয়েছিলেন, ‘তুমি তো নাটক ভালবাসো। চলো, কলকাতায় গিয়ে একসঙ্গে নাটক দেখব।’ বেশ কয়েকটা কাগজে এই খবরটা বেরিয়েওছে। উচ্চ মাধ্যমিকে প্রথমের সঙ্গে নাটক দেখছেন গৌতম দেব। একটা পেজ ওয়ান ছবি হতেই পারত। এমনিতে গৌতম দেবদের ছবি শিলিগুড়ি এডিশনে বেরোলেও কলকাতা এডিশনে তিনি বিশেষ পাত্তা পান না। গ্রন্থনের সুবাদে অন্তত অল এডিশনে একটা ছবি বেরোতো। অন্তত এই ছাত্রের সুবাদে একটা দিনের জন্য হলেও কিছুটা জাতে ওঠা যেত।
রাজ্যের একজন মন্ত্রী সম্পর্কে এসব কথা না তুললেই ভাল হত। কিন্তু তিনি যখন ঘটা করে সাংবাদিক সম্মেলন ডেকেছেন, তিনি যখন কোনও প্ররোচনা ছাড়াই অশোক ভট্টাচার্যের দিকে সমালোচনা ছুঁড়ে দিচ্ছেন, তখন এই পাল্টা কথাগুলোও উঠে আসবে।
অশোক ভট্টাচার্য যেতেই পারেন। গ্রন্থনের মা–বাবা দুজনেই বাম মনষ্ক। এই কঠিন সময়েও বাম পরিবারের একজন তরুণ যখন এই সাফল্য পেয়েছে, তখন তার বাড়িতে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। তবু যদি সস্তা প্রচারের অভিযোগ ওঠে, তাহলে বিনীতভাবে বলতেই হয়, গৌতম দেব, আপনিও কোনও মহৎ উদ্দেশ্যে যাননি।