পর্যটকের ডায়েরি
গিয়েছিলাম শান্ত শিলংয়ে। তা যে হঠাৎ এমন অশান্ত হয়ে উঠবে, কে জানত। চেরাপুঞ্জি থেকে ফিরে আসার পরই অদ্ভুত এক ভয়ের আবহ। সারাক্ষণ সেনার টহলদারি। প্রাণ হাতে নিয়েই ফিরে আসতে হয়েছে। তা সত্ত্বেও সরকার ও প্রশাসনের ভূমিকা বেশ প্রশংসনীয়। পর্যটকের ডায়েরি। লিখলেন দেবাংশু ঘোষ।
শিলংয়ে এসে যে এমন বিপদে পড়ে যাব, ভাবতেও পারিনি। আমাদের রাজ্যে অনেকদিন আগে থেকেই ভ্যাপসা গরম। অবশ্য শিলং আসার পরিকল্পনাটা তার অনেক আগে থেকেই নেওয়া ছিল। এমনিতেই গরমের ছুটিতে পাহাড় যাওয়া অনেকদিনের অভ্যেস। পাহাড় বলতে মূলত দার্জিলিং ও সিকিম। তবে চেনা জায়গাগুলো ছাড়াও নানা অচেনা জায়গায় বারবার গেছি।
অনেকদিন ধরেই ভাবছিলাম, এবার শিলং যাব। প্রায় তিন মাস আগে টিকিট কেটে ফেলেছি। হোটেল বুকিংও সেরে ফেলেছিলাম মাস দুই আগে। যদিও আমাদের বাংলার পাহাড়ে শান্তি ফিরেছে। যাওয়াই যেত। কিন্তু মনে হল, এবার অমিত–লাবন্যের দেশে যাওয়া যাক। গিন্নিও এক কথায় রাজি। সঙ্গে আরও এক বন্ধু ও বন্ধুপত্নী।
গরিব রথ ধরে এসেছিলাম প্রথমে গুয়াহাটিতে। সেখানে একদিন কাটিয়ে মেঘের দেশ শিলং। প্রথম দিনটা তেমন ঘোরাঘুরি হয়নি। শুয়ে, বসে, আড্ডা দিয়েই কেটে গেছে। দ্বিতীয় দিন গুয়েছিলাম চেরাপুঞ্জির দিকে। ফিরে আসার আগেই শুনছিলাম, খুব গোলমাল চলছে। আদৌ শিলংয়ে ফিরতে পারব কিনা, তা নিয়েও সন্দেহ ছিল। ড্রাইভার সাহেব বলেছিল, এখন না ফেরাই ভাল। অন্য কোথাও থেকে গেলে ভাল হয়। পরিস্থিতি ঠান্ডা হলে, তারপর ফেরা উচিত। কিন্তু কয়েকজন আশ্বস্ত করলেন, ভয়ের কিছু নেই। যতই ঝামেলা হোক, পর্যটকদের ওপর কোনও আঁচ পড়বে না। পুলিশও পর্যটকদের গাড়ি আটকাবে না।
দেখলাম ঠিক তাই। পুলিশ প্রশাসন বিভিন্ন গাড়ি আটকাচ্ছে। যেন একটা অঘোষিত কার্ফু চলছে। কিন্তু পর্যটকদের গাড়ি যেতে দিচ্ছে। তবে পুলিশ জানিয়ে দিল, সেই গাড়িতে হোটেল পর্যন্ত না যাওয়াই ভাল। একটা নির্দিষ্ট এলাকা পর্যন্ত যাওয়ার পর কোন হোটেলে উঠেছি, জানতে চাইল। তারপর একটা গাড়িতে আমাদের সঙ্গে আরও কয়েকজনকে তোলা হল। পুলিশি পাহারায় আমাদের হোটেলে পৌঁছে দেওয়া হল।
কেন ঝামেলা, কীসের ঝামেলা, খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করেছি। কিন্তু পরিষ্কার উত্তর পাইনি। নেটও কাজ করছে না। পরে শুনলাম, এটা হিন্দু–মুসলিম ব্যাপার নয়। সামান্য একটা ঘটনাকে ঘিরে এই অশান্তি। শহরে র্যাফ নেমে গেছে। হোটেলের চারপাশে সেনার টহল। কেমন যেন ভয় ভয় করছে। যদিও হোটেলের লোকেরা বারবার আশ্বস্ত করেছিলেন, ভয়ের কিছু নেই। আপনাদের কোনও ক্ষতি হবে না।
শেষে পুলিশি পাহারায় আমাদের অনেককেই গুয়াহাটি পৌঁছে দেওয়া হয়। রাস্তায় তেমন কোনও সমস্যা হয়নি। বেড়ানো প্রায় মাথায় উঠল। আআদের মতো অনেককেই মাঝপথে নেমে যেতে হল। এমনটা হবে, ভাবতে পারিনি। তবে স্থানীয় সরকার ও পুলিশের ভূমিকা বেশ প্রশংসনীয়। পর্যটকদের আস্থা কীভাবে অর্জন করতে হয়, তা ওই ছোট্ট রাজ্যটাকে দেখে শেখা উচিত। যতদূর খবর পেয়েছি, সত্যিই কোনও পর্যটকের গায়ে হাত পড়েনি। অনেকেই নিরাপদে নেমে এসেছেন। কেউ কেউ অবশ্য থেকে গেছেন। পরিস্থিতি আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হয়ে আসছে।
এবার অমিত–লাবন্যের শহরে থাকা হল না। পরেরবার আবার যাব।
(লেখক একজন শিক্ষক। সাক্ষাৎকারভিত্তিক অনুলিখন। টেলিফোনে নিজের অনুভূতি জানিয়েছিলেন। তাই শুনে বেঙ্গল টাইমসের পাঠকদের কাছে পেশ করা হল। )