রাজেশ মণ্ডল
কমর্সূত্রে বাংলার বাইরে থাকি। কিন্তু যা হয়! মন পড়ে থাকে সেই বাংলাতেই। দিনের বেলায় বাংলা চ্যানেল দেখার সুযোগ থাকে না। রাতে বাড়ি ফিরে দেখার চেষ্টা করি। পরদিন সকালে বিভিন্ন কাগজের নেট এডিশন খুঁটিয়ে পড়ি। এখন নানা পোর্টাল হয়েছে। সর্বোপরি ফেসবুক। টাটকা আপডেট থাকা যায়।
পঞ্চায়েতে বারবার দেখেছি শুধু হিংসার ছবি। বাংলার ভোটে আগে যে হিংসা হয়নি, এমন নয়। কিন্তু এবার পঞ্চায়েত যেন সবকিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছে। তাই এই বড় জয়ের পরেও তৃণমূলকে অভিনন্দন জানাতে ইচ্ছে করে না। বরং সন্ত্রাসকে যেভাবে প্রশ্রয় দেওয়া হয়েছে, যেভাবে পিঠ চাপড়ানো হয়েছে, তাতে শাসকের প্রতি কিছুটা ঘৃণাও তৈরি হয়েছে। এই প্রথম আমি ভোট দিতে পারিনি। এর আগে ভোট দেওয়ার জন্য ছুটি নিয়ে নিজের এলাকায় এসেছি। এবারও আসব ভেবেছিলাম। কিন্তু শুনলাম, আমার এলাকায় বিরোধী দলের কাউকে প্রার্থী হতেই দেওয়া হয়নি। আমার ভোট যে বিরোধীদের বক্সেই পড়ত, এমন নয়। এর আগের পঞ্চায়েতে গ্রাম পঞ্চায়েত ও জেলা পরিষদে আমি তৃণমূলকেই ভোট দিয়েছি। পঞ্চায়েত সমিতিতে দিইনি। কারণ, সেই প্রার্থীর প্রতি আমার আস্থা ছিল না। বামেদের প্রার্থী তুলনায় অনেক ভাল ছিলেন। এবার হলেও হয়ত একটা ভোট তৃণমূলের দিকেই পড়তে পারত। বিশেষত জেলা পরিষদের প্রার্থীকে ভোট দিতে আপত্তি ছিল না। কিন্তু ওঁরা সে সুযোগটুকুও দিলেন না। আমার মতো অনেকেই নিজের ভোট দিতে পারেননি। এর ফল যে কী হতে পারে, অনেকে বুঝতেও পারছেন না।
নিজের বৃত্তান্ত শোনানোর জন্য কলম ধরিনি। তাছাড়া, আমি কাকে ভোট দিতাম, তাতে কার কী এসে যায়! নিজেকে এত মূল্যবান মনে করি না। কিন্তু আমার মতো আরও লক্ষ লক্ষ মানুষ আছেন, যাঁরা এবার ভোট দেওয়ার সুযোগ পেলেন না। তাঁদের অনেকে হয়ত তৃণমূলকেই দিতেন। কিন্তু এই ঘটনার পর তাঁরা কি তৃণমূলে দেবেন? মনে তো হয় না। আমি অন্তত আর এই দলকে ভোট দিচ্ছি না। কাকে দেব, এখনও ঠিক করিনি। বলতে পারেন, কিছুটা দোদুল্যমান। বাম বা বিজেপি–র মধ্যে যাঁকে ভাল প্রার্থী বলে মনে হবে, তাঁকেই দেব।
যাঁরা শাসকদলের সমর্থক, তাঁদেরও মনে হবে, আমি তো এদেরকেই দিতাম। তাও আমার ওপর ভরসা রাখতে পারল না? তার মানে, এরা আমাকে বিশ্বাস করে না? যদি কেউ এমনটা ভেবে থাকেন, তাকে কি খুব দোষ দেওয়া যাবে। বন্ধুদের মুখে শুনেছি, অনেক জায়গায় বামেরাও প্রক্সি ভোট দিত। পঞ্চায়েতে অনেক জায়গায় তখনও বিরোধীরা প্রার্থী দিতে পারেনি। আজ তার প্রায়শ্চিত্ত করতে হচ্ছে বামেদের। সেদিন তবু চক্ষুলজ্জাটুকু ছিল। আজ সব চক্ষুলজ্জাই বিসর্জন দিয়েছে শাসক দল। এমনকী ডিএম, এসপি–রাও যেন দলের অনুগত দাস। ওসি, বিডিও রা তো সত্যিই অসহায়। শাসকের জয় সুনিশ্চিত করাই যেন তাঁদের প্রাথমিক কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ভাবতে অবাক লাগে, কোন পথে চলেছি আমরা? এই বাংলা নিয়ে সত্যিই গর্ব করার সুযোগ কমে আসছে। কেন ভোট দিতে যেতে পারিনি, সেকথা ভিনরাজ্যের বন্ধুদের বলতেও পারছি না। এ যে কী যন্ত্রণা, সবাই হয়ত অনুভব করতে পারবেন না। আবার বলছি, এই সন্ত্রাসকে বিক্ষিপ্ত বলে মানতে রাজি নই। এত দূরে বসেও বুঝতে পারছি, এই সন্ত্রাস সর্বত্রব্যাপী। দলের নেতারা জানতেন না, বা তাঁরা এমনটা চাননি, এটাও মানতে রাজি নই। তাঁরা চেয়েছেন বলেই এমন ভয়ের আবহ তৈরি হয়েছে।
নিজেদের কী ক্ষতি করলেন, তা তৃণমূল নেতারা হয়ত এখনও বুঝে উঠতে পারছেন না। এটাই হয়ত ব্যুমেরাং হয়ে ফিরে আসবে।
(এটি ওপেন ফোরামের লেখা। মতামত লেখকের। আপনিও আপনার মতামত তুলে ধরতে পারেন বেঙ্গল টাইমসের ওপেন ফোরামে। এটি হল পাঠকের মুক্তমঞ্চ। স্বাধীনভাবে নিজের মত তুলে ধরুন।)