আসলে সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে স্বপন সাহার যা তফাৎ, সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে স্বপন ব্যানার্জিরও সেই তফাৎ। সত্যজিতকে সরিয়ে স্বপনকে ফুটবল সচিব করলে যা হয় তাই হচ্ছে। সত্যজিৎ ফুটবল বোঝেন তাই সেই রকম টিম করতেন। স্বপন রাজনীতি বোঝেন, তাই চমক দেওয়া, দল ভাঙ্গানো, ভোটব্যাঙ্ক এই সব করছেন। লিখেছেন সন্তু ভৌমিক।।
তরুণ দে, মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য ইস্টবেঙ্গলের ঘরের ছেলে। কিন্তু খেলোয়াড়ি মানসিকতা এবং প্রতিভার কারণে তাঁরা মোহনবাগানিদের শ্রদ্ধা আদায় করেছিলেন। খেলোয়াড়ি জীবনের শেষ দিকে তাঁরা যখন মোহনবাগানে এলেন তখন মোহনবাগানিরা উল্লসিত হয়েছিলেন। মোহনবাগানে এসে তাঁরা বিশেষ কিছু করতে পারেননি। কিন্তু তাঁদের সবুজ-মেরুন জার্সি পরাতে পারাটাই ছিল এক ধরণের জিত। দ্যাখ বাঙালরা (তখনও লোটা কথাটা চালু হয়নি) তোদের ঘরের ছেলে এখন আমাদের। দীর্ঘ টানাপড়েনের পর কৃশানু দে যখন মোহনবাগানে এলেন তখনও একই রকম আনন্দ পেয়েছিলেন সবুজ মেরুন সমর্থকরা। আনন্দ পেয়েছিলেন বাইছুং ভুটিয়াকে দলে পেয়ে।
ইস্টবেঙ্গলের দিক থেকেও সুব্রত ভট্টাচার্যকে লাল-হলুদ জারসি পরানোর চেষ্টা হয়েছিল। সুব্রত সেই ফাঁদে পা দেননি। তবে শিশির ঘোষকে জালে তোলা গেছিল। তোলা গেছিল বিজয়নকেও। ওহঃ দলবদল নিয়ে সে সব কী রোমাঞ্চকর
দিন! বিপক্ষের নায়ককে নিজের ঘরে পেয়ে সে কী উত্তেজনা! উত্তেজনা ছিল, কারণ যে দলেই খেলুন তাঁদের শ্রদ্ধা করতেন বিপক্ষের সমর্থকরা। বেশিদিন আগের কথা নয়, টোলগে মোহনবাগানে আসায় এনে কেমন হই হল্লা হয়েছিল ভাবুন। কিম্বা কাতসুমিকে ইস্টবেঙ্গলে আসায়।
এর সঙ্গে তুলনা করুন মেহতাবের মোহনবাগানে আসাকে। তার ওপর এমন একটা তিনি এবং আলভিটো শুধু ইস্টবেঙ্গলের ঘরের ছেলে নন, মোহনবাগানিদের অত্যন্ত অপছন্দের ছেলে। কেন অপছন্দের তা নাই বা লিখলাম। যে কোনও মোহনবাগান সমর্থককে প্রশ্ন করে জেনে নিন।
একে তো কথায় কথায় কার্ড দেখার অভ্যাস। দলে গ্রুপবাজি করার অভিযোগও আছে তাঁর বিরুদ্ধে। তার ওপর এমন একটা সময়ে মেহতাব মোহনবাগানে এলেন যখন তার বয়স ৪০ হতে চলেছে। যে ক্লাব টাকা বাঁচানোর জন্য সনি নর্ডিকে দলে না নেওয়ার কথা ভাবছে, তারা দলে আনছে মধ্য তিরিশের এক গন্ধগোকুলকে। মোহনবাগান থেকে ইস্টবেঙ্গলে গিয়ে তিনি ঘরের ছেলেতে পরিণত হয়েছিলেন। যখন আবার মোহনবাগানে ফিরে এলেন তখন তিনি ঘরের জেঠু, ছেলে নন।
মোহনবাগানের এবারের সম্ভাব্য দলে দুজন বিদেশি ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার। ইউতা এবং ওয়াটসন। তাহলে মেহতাব খেলবে কোথায়? রিজার্ভ বেঞ্চে? না কি ড্রেসিং রুমে? গত কয়েক বছর মোহনবাগানের মূল শক্তি ছিল ড্রেসিং রুমের পরিবেশ। এবছর সেটা বিগড়ে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা।
আসলে সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে স্বপন সাহার যা তফাৎ, সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে স্বপন ব্যানার্জিরও সেই তফাৎ। সত্যজিতকে সরিয়ে স্বপনকে ফুটবল সচিব করলে যা হয় তাই হচ্ছে। সত্যজিৎ ফুটবল বোঝেন তাই সেই রকম টিম করতেন। স্বপন রাজনীতি বোঝেন, তাই চমক দেওয়া, দল ভাঙ্গানো, ভোটব্যাঙ্ক এই সব করছেন।
মেহতাবের দলবদলে সব থেকে আনন্দ পাওয়ার কথা ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের। কারণ অরণ্যের প্রাচীন প্রবাদ, ‘মেহতাবের সঙ্গে ইংরেজি আই অক্ষরটি খাপ খায় না।’ তাই আই-লিগ বা আই এস এল কোনটাতেই তাঁর সাফল্য নেই। সুতরাং এবার আই লিগে ইস্টবেঙ্গলের ফাঁড়া কাটার সুবর্ণ সুযোগ।
আর মোহনবাগান? এবছরও হয়তো হল না রে!