ওপেন ফোরাম
ছোট থেকেই শুনছি, ত্রিস্তর পঞ্চায়েত। তিনটে স্তর কী কী? এর মানেটাই বুঝতাম না। পরে যদিওবা বুঝলাম, তাও ভুল। এবার বুঝলাম। মনোনয়ন, ভোট, গণনা— এই তিনটি পর্যায়েই উন্নয়ন কীভাবে বন্দুক হাতে দাঁড়িয়ে থাকে। এতদিনে বুঝলাম, ‘ত্রিস্তর’ কাকে বলে। ওপেন ফোরামে লিখেছেন রজত সেনগুপ্ত।।
এতদিন শুনে আসছিলাম ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের কথা। ছোটবেলায় এই শব্দটার ঠিক মানে বুঝতাম না। ত্রিস্তর আবার কী জিনিস। অনেককে জিজ্ঞেস করতাম। যা উত্তর আসত, তাতে ব্যাপারটা আরও গুলিয়ে যেত।
একটু বড় হয়ে বুঝলাম, গ্রাম পঞ্চায়েত মানে একটা অঞ্চল। কয়েকটা অঞ্চল নিয়ে হয় ব্লক। তার নামই পঞ্চায়েত সমিতি। সেটা আরও বড় ব্যাপার। তার থেকেও বড় ব্যাপার নাকি জেলা পরিষদ। তারা গোটা জেলা সামলায়।
এখন বুঝতে পারছি, ওই জানাটা ঠিকঠাক জানা ছিল না। ত্রিস্তর পঞ্চায়েত মানে আসলে একটু অন্যরকম।
১) প্রথম পর্যায়। বিরোধীদের মনোনয়ন দিতে দেওয়া চলবে না। দিলেও ধমক দিয়ে তুলিয়ে দিতে হবে।
২) দ্বিতীয় পর্যায়। যে কটা আসনে ভোট হবে, সেখানে তুমুল দাবড়ানি দিতে হবে। উন্নয়নকে রাস্তায় দাঁড় করিয়ে দিতে হবে। যেন কেউ ধারেপাশে না ঘেঁসতে পারে।
৩) তৃতীয় পর্যায়। গণনা। এই টেবিলেও অনেককিছু করা যায়। অনেক ফলাফল উল্টে পাল্টে দেওয়া যায়। উল্টোদিকের ভোট! ব্যালট ছিঁড়ে দাও, বা এদিকের বান্ডিলে জুড়ে দাও। বেশি বাড়াবাড়ি করলে বিরোধী এজেন্ট দাও দু থাপ্পড়। যদি কেউ জিতেও যায়, তুলে আনো বাড়ির লোককে। সামিল করে দাও উন্নয়নে। ধরিয়ে দাও হাতে পতাকা।
আপাতত এই হল ত্রিস্তর পঞ্চায়েত। এর আসল মর্মটা একমাত্র শাসক দলই বুঝেছে। সত্যিই, ছোটবেলায় আমরা কত উল্টো পাল্টা জেনেছি! ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের আসল মানেটাই বুঝিনি।
ভাগ্যিস, এই রাজ্যে ‘উন্নয়ন’ এসেছিল। এই উন্নয়নের ঠেলায় বুঝতে পারলাম, কত ‘শান্তিপূর্ণভাবে’ ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচন হয়।
‘অনুপ্রেরণা’ সত্যিই বড় ভয়ঙ্কর জিনিস।